আদাব গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর

 আদাব: সমরেশ বসু

৩.৩ হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতির আবহ আদাব গল্পে কীভাবে রচিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।

আদাব গল্পটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোট গল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। এই গল্পে লেখক দেখিয়েছেন যে হিন্দু মুসলমান দাঙ্গার মধ্যেও দেশের সাধারণ হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে স্বাভাবিক সম্প্রীতি নষ্ট হয়নি। দাঙ্গা বিধ্বস্ত ঢাকা শহরের এক রাতে একজন হিন্দু সুতা মজুর ওয়েক মুসলমান মাঝি আশ্রয় নেয় রাস্তার ডাস্ট বিনের আড়ালে কিছুক্ষণ পর তারা পরস্পরকে দেখতে পায় ও পরস্পরের প্রতি সন্দেহ করতে থাকে কিন্তু একটুখানি পরিচয় এর পরেই মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা অনুসারে তারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠে। একে অপরের প্রতি নির্ভর করতে শুরু করে। মুসলমান মাঝি পালাতে চাইলে সুতা মজুর প্রথমে তাকে বাধা দেয় তারপর যখন জানতে পারে যে পরের দিন ঈদের উৎসব তখন সুতা মজুর তাকে আর বাধা দেয় না বরং পুলিশের নজর এড়িয়ে তাকে চলে যেতে সাহায্য করে একে অপরকে বিদায় জানানোর সময় দুজনেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। মাঝি চলে যাওয়ার পর সুতা মজুরের উৎকণ্ঠা ও কল্পনায় জুড়ে থাকে মুসলমান মাঝি। এভাবেই এই গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন যে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে যে হিংসা তা আসলে একদল স্বার্থপর মানুষের চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয় সাধারন হিন্দু ও মুসলমান নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতেই ভালোবাসে। 




৩.৫ "এমনভাবে মানুষ নির্মম নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে কী করে?" -- উদ্ধৃতির আলোকে সেই সময়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি আলোচনা করো।

সমরেশ বসুর লেখা 'আদাব' গল্পটি রচিত হয়েছে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার প্রেক্ষাপট। স্বাধীনতার ঠিক আগে ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রে প্রথমে পূর্ববঙ্গে ও তারপর পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভীষণ দাঙ্গা শুরু হয়। এই দাঙ্গার ফলে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের পরিকল্পনা উঠে আসে। এই দাঙ্গার ফলেই দেশভাগ হয়। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হওয়ার ফলে বহু হিন্দু কে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আসতে হয়, বহু মুসলমান কে ভারত ছেড়ে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে চলে যেতে হয়। অবশ্য সেই সময় বাংলাদেশ‌ও পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল। 

"রাত্রির নিস্তব্ধতাকে কাঁপিয়ে দিয়ে মিলিটারি টহলদার গাড়িটা একবার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে একটা পাক খেয়ে গেল।"-- তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো

উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসুর লেখা আদাব গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃত অংশে দাঙ্গার সময় রাতের বেলার ঢাকা শহরের একখানি টুকরো ছবি ধরা পড়েছে। এই ছবির মধ্যে লুকিয়ে আছে হাড় হিম করা নিস্তব্ধতা ও ব্রিটিশ মিলিটারির কঠোর শাসনের কথা। একদিকে দাঙ্গাবাজদের ভয় আর অন্যদিকে মিলিটারি শাসনের ভয়, এই দুই ভাই মিলে সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল।


"ডাস্টবিনের দুই পাশে দুটি প্রাণী নিস্পন্দ নিশ্চল‌।" তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসুর লেখা আদাব গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পূর্ববর্তী হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার প্রেক্ষাপট লেখা এই গল্পে দেখা যায় দেখা যায় দাঙ্গার সময় এর রাতে ঢাকা শহরের রাস্তার পাশে একটি ডাস্টবিনের দুপাশে দুজন সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আশ্রয় নেয়। এই দুজন মানুষের নিস্পন্দ নিশ্চলতা থেকে বোঝা যায় তারা কতখানি বিপন্ন ও সন্ত্রস্ত। উদ্ধৃত অংশটি তে লেখক দাঙ্গার সময় সাধারণ মানুষের অসহায়তার ছবিকেই স্পষ্ট করে তুলেছেন। 


"স্থান কাল ভুলে রাগে-দুঃখে মাঝি প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে।"- তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উদ্ধৃত অংশটি সমরেশ বসুর লেখা আদাব গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। গল্পের প্রধান দুটি চরিত্র মাঝি ও মজুর ডাস্টবিনের আড়ালে বসে থাকতে থাকতে মাঝে যখন সেখান থেকে চলে যেতে চাইলো তখন তার জেদ দেখে সুতা মজুরের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। সে সন্দেহ প্রকাশ করে এই ব'লে যে, মাঝি হয়তো তার দলবল ডেকে এনে সুতো মজুরকে মারার মতলব করছে। এই কথা শুনে মাঝি রাগে-দুঃখে চেঁচিয়ে উঠে বলে, "এইটা কেমুন কথা কও তুমি?" মাঝির এই চিৎকারের অন্তরালে লুকিয়ে আছে তার সততা ও আন্তরিকতা। মাঝি একজন সাধারণ সংসারী মানুষ, সে যে কাউকে মারতে পারেনা একথা তার চেয়ে ভালো আর কে জানে! আসলে প্রতিটি সাধারণ মানুষই এই মাঝির মত নিরীহ, নির্বিবাদী। কিন্তু ধর্ম আর সাম্প্রদায়িকতার বিষ যখন মানুষের মনে ঢোকে তখন সাধারণ মানুষই হয়ে যায় হিংস্র খুনি। 


ক্রিয়ার কাল নির্ণয় করো

১: কান পেতে র‌ইলো দূরের অপরিস্ফূট কলরবের দিকে। -- সাধারণ অতীত।
২: সন্দেহের দোলায় তাদের মন দুলছে। -- ঘটমান বর্তমান।
৩: ধারে কাছেই য্যান লাগছে। -- পুরাঘটিত বর্তমান (বঙ্গালী উপভাষায় 'লাগছে' = লেগেছে)
৪: অশান্ত চঞ্চল ঘোড়া কেবলি পা ঠুকছে মাটিতে। -- ঘটমান বর্তমান
৫: বাদামতলির ঘাটে কোন অতলে ডুবাইয়া দিছে তারে‌। -- পুরাঘটিত বর্তমান। (দিছে = দিয়েছে)



Comments

Popular Posts