বিদ্যাসাগর কবিতার বিশ্লেষণ
বিদ্যাসাগর
বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু !– উজ্জ্বল জগতে
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !
দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী।
যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
দীর্ঘ-শিরঃ তরু-দল, দাসরূপ ধরি।
পরিমলে ফুল-কুল দশ দিশ ভরে,
দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে।
বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু !
ব্যাখ্যা: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে কবি বলছেন: "তুমি বিদ্যার সাগর নামে ভারতে বিখ্যাত। কিন্তু হে দীনের বন্ধু, তুমি যে করুণারও সমুদ্র, এ কথা সেই জানে, যে দীন বা দরিদ্র।" এখানে চরণের শেষে অবস্থিত 'দীনের বন্ধু' অংশটি সম্বোধন রূপে ব্যবহৃত হয়েছে।
("দীন যে, দীনের বন্ধু" অংশটির ভুল ব্যাখ্যা অনেকেই করে থাকেন। তাঁরা বলেন "যে দীন, সে-ই দীনের বন্ধু" বা গরীবই গরীবের বন্ধু। এ রকম ব্যাখ্যা নিতান্তই হাস্যকর। এ রকম হলে 'যে'-এর পর কমা চিহ্ন থাকতো না। তাছাড়া এই কবিতায় বিদ্যাসাগরকে গরীব বলা হয়নি, গরীবের বন্ধু বলা হয়েছে। তিনি গরীব ছিলেনও না। সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ বিদ্যাসাগরের মাসিক মাইনে ছিলো ৫০০ টাকা। বর্তমান দিনে যার মূল্য ৫ লক্ষ টাকার বেশি।)
উজ্জ্বল জগতে
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !
ব্যাখ্যা: পরবর্তী অংশে কবি বলছেন: অম্লান সূর্য কিরণে হিমালয় পর্বতের সোনার মতো রূপ (হেম-কান্তি) জগতে উজ্জ্বল। কিন্তু ভাগ্যগুণে যে ব্যক্তি সেই মহা-পর্বতকে পায় এবং তার সোনার চরণে আশ্রয় নেয়, সে-ই জানে গিরিশ (গিরিশ্রেষ্ঠ) কত গুণের অধিকারী। তার সদনে (গৃহে) কত সেবার আয়োজন।
দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী।
যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
দীর্ঘ-শিরঃ তরু-দল, দাসরূপ ধরি।
পরিমলে ফুল-কুল দশ দিশ ভরে,
দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে।
কবিতার শেষ ছটি পংক্তি বা ষটকে কবি হিমালয় পর্বতের গুণগান করেছেন (আসলে হিমালয়ের গুণগানের মধ্য দিয়ে বিদ্যাসাগরের গুণগান করেছেন।) তিনি বলেছেন: বিমলা(অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন) নদী দাসী রূপে জল দেয়। দীর্ঘ গাছেরা দাস রূপ ধরে অমৃতের মত সুস্বাদু ফল দান করে। ফুলেরা সুগন্ধে দশদিক ভরিয়ে তোলে। দিনের বেলায় শীতল শ্বাসী ছায়া দেয়। রাত্রিবেলা শান্তির নিদ্রা ক্লান্তি দূর করে।
Comments
Post a Comment