ছন্নছাড়া কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
ছন্নছাড়া কবিতার মূল বক্তব্য বা সারাংশ
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা 'ছন্নছাড়া' কবিতাটি একটি রূপকধর্মী গদ্য কবিতা। এই কবিতায় একদল ছন্নছাড়া বেকার ছেলের মাধ্যমে প্রাণের গৌরবকে ঘোষণা করা হয়েছে। যে ছন্নছাড়া বেকার ছেলেরা সমাজ থেকে পরিত্যক্ত হয়েছে, যাদের জন্য না আছে শিক্ষা, না আছে কাজ, না আছে আশ্রয়, না আছে আদর্শ, না আছে খেলার মাঠ, না আছে প্রেম, তাদের মধ্যেও মানবতা বেঁচে আছে। তাদের বাইরের রুক্ষতা দেখে সমাজ তাদের গায়ে 'সমাজবিরোধী' তকমা এঁটে দিয়েছে। কিন্তু বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারাই। মধ্যবিত্ত তথাকথিত ভদ্র সমাজ নিজের মেকি শালীনতা আঁকড়ে পড়ে থাকে স্বার্থপরতার হীন গণ্ডীর ভিতর। যে গাছের পাতা ঝরে গেছে, তাকে দেখে সাময়িক ভাবে মনে হতে পারে তার মধ্যে প্রাণ নেই। কিন্তু উপযুক্ত সময় এলে সেই গাছ থেকেই বেরিয়ে আসে কচি পাতা। ঠিক তেমনি ভাবে এই সব ছন্নছাড়া বেকার যুবকদের মধ্যেও মানবতা বেঁচে আছে। তাদের জীবনে প্রাণের স্পন্দন যেন আমাদের মতো অর্ধমৃত মধ্যবিত্তের তুলনায় অনেক বেশি। প্রাণের আশ্চর্য সম্পদে সমৃদ্ধ এই ছন্নছাড়া ছেলেদের মধ্যে কবি খুঁজে পেয়েছেন এক দুর্বার মানবিক উচ্চারণ, প্রত্যয়ের এক তপ্ত শঙ্খধ্বনি, ক্ষয়হীন আশা, মৃত্যুহীন মর্যাদা।
"প্রাণ আছে, প্রাণ আছে" --- ছন্নছাড়া কবিতায় এই আশাবাদ কীভাবে ধ্বনিত হয়েছে?
কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ছন্নছাড়া কবিতার সার কথা নিহিত আছে একটিমাত্র পঙক্তিতে -- "প্রাণ আছে এখনো প্রাণ আছে"। যে সব ছন্নছাড়া বেকার ছেলেদের বাইরের রুক্ষতা দেখে আমাদের সমাজ তাদের পরিত্যাগ করেছে, যাদের গায়ে সেঁটে দিয়েছে 'সমাজবিরোধী' তকমা, আমাদের কবি তাদের মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন মানবিকতার এক অনির্বাণ উজ্জ্বল শিখা। পাতাঝরা গাছকে দেখে হঠাৎ যেমন মৃত বলে মনে হয় এই বেকার ছেলেদের দেখে আমাদের সমাজ তেমনই ভুল করে বসে। কিন্তু এরাই যখন বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন বেরিয়ে আসে এদের প্রকৃত স্বরূপ। প্রাণের স্পন্দনে সমস্ত রুক্ষতা বিদীর্ণ করে করে বেজে ওঠে এক দুর্বার উচ্চারণ, প্রত্যয়ের তপ্ত শঙ্খ ধ্বনি "প্রাণ আছে এখনো প্রাণ আছে।"
কবিতায় গাছটি কিভাবে প্রাণের প্রতীক হয়ে উঠেছে তা আলোচনা করো
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ছন্নছাড়া কবিতায় একটি শুকিয়ে যাওয়া গাছের কথা রয়েছে। পাতা ঝরা এই গাছকে দেখলে প্রাথমিকভাবে মনে হবে মৃত। আবার অন্যদিকে একদল ছন্নছাড়া বেকার ছেলের বাহ্যিক রুক্ষতা দেখে মনে হয় তাদের জীবনও বুঝি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। কিন্তু একটু পরেই আমাদের ভুল ভেঙে যায়। দেখা যায় এই বেকার ছেলেগুলি বিপন্ন মানুষের জীবন বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের বাহ্যিক রুক্ষতা ভেদ করে বেরিয়ে আসে মানবতার সবুজ কচি পাতা। একইসঙ্গে কবিতায় উল্লিখিত পাতা ঝরা গাছটিতেও গজিয়ে ওঠে সবুজ কচি পাতা। প্রাণের স্পন্দনে মর্মরিত হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস। এইভাবে একটি গাছ হয়ে উঠেছে চিরন্তন প্রাণের প্রতীক।
ছন্নছাড়া কবিতায় নিজের ভদ্রতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে চাওয়া মানুষটির ছন্নছাড়া দের প্রতি যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা বুঝিয়ে দাও।
উঃ ছন্নছাড়া কবিতায় নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন কবিতার কথক তথা কবি। পথদুর্ঘটনায় আহত মানুষটিকে ট্যাক্সিতে তোলার পর কবিতার কথক রক্তের দাগ থেকে নিজের জামাকাপড় কে বাঁচানোর জন্য ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়লেন। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কথক ছন্নছাড়া ছেলেদের সম্পর্কে নিজের ভেতর এক নতুন উপলব্ধি লাভ করলেন। তিনি অনুভব করলেন যে এই ছন্নছারা ছেলে গুলির মধ্যে এখনো লুকিয়ে আছে মহতের সম্ভাবনা। মানুষের প্রাণ কে বাঁচানোর জন্য তারা যেভাবে ঝাপিয়ে পরল তা দেখে কথক বুঝতে পারলেন এই ছন্নছাড়ারা সমাজের আবর্জনা নয়। তাদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে মহান জীবন-ধর্ম।
"এক ক্ষয় হীন আশা/ এক মৃত্যুহীন মর্যাদা" -- প্রাণকে কবির এমন অভিধায় অভিহিত করার সঙ্গত কারণ নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করো।
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ছন্নছাড়া কবিতায় একটি আপাত-তুচ্ছ ঘটনার মধ্য দিয়ে চিরন্তন প্রাণের ও শাশ্বত মানবতার জয়গান গাওয়া হয়েছে। পথদুর্ঘটনায় আহত মৃতপ্রায় এক ভিখারি কে বাঁচাতে গিয়ে একদল ছন্নছাড়া যুবক যখন টের পেল যে ভিখারির মধ্যে তখনও প্রাণ আছে, তখন তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো প্রাণ আছে এখনো প্রাণ আছে। এই প্রাণ শুধুমাত্র মৃতপ্রায় ভিখারির মধ্যে আছে তা নয়, ওই সব ছন্নছাড়া যুবকদের মধ্যেও প্রাণ আছে, প্রাণের মর্যাদা আছে। সমাজের চোখে অবহেলিত তুচ্ছ এক ভিখারির প্রাণকে রক্ষা করার জন্য একদল যুবকের ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘটনা প্রমাণ করে দেয় যে মানুষের প্রাণ মহামূল্যবান। আপাতদৃষ্টিতে যেসব মানুষের জীবন মূল্যহীন বলে মনে হয় তাদের মধ্যেও লুকিয়ে আছে শাশ্বত জীবনের সম্ভাবনা এবং মৃত্যুকে জয় করে জীবনের জয়ধ্বজা ওড়ানোর অঙ্গীকার। কবি এই কারণেই প্রাণকে 'ক্ষয়হীন আশা' ও 'মৃত্যুহীন মর্যাদা' অভিধায় অভিহিত করেছেন।
"কারা ওরা?" -- কবিতা অনুসরণে ওদের পরিচয় দাও।
উদ্ধৃত অংশটি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ছন্নছাড়া কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে ওরা বলতে একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবকের কথা বলা হয়েছে। সমাজের চোখে এরা ঘৃণার পাত্র। ভদ্রলোকেরা এদের কাছে ঘেঁষে না। সবাই এদের সমাজবিরোধী মনে করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এরা সমাজের কাছে বঞ্চনা ছাড়া আর কিছু পাইনি। এর এক নেই রাজ্যের বাসিন্দে। অথচ মানুষের বিপদে এরাই সকলের আগে ছুটে যায়।"গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে/গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া" -- একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে বলেও কেন পরের পঙক্তিতে তাকে গাছের প্রেতচ্ছায়া বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও।
উদ্ধৃত অংশটি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ছন্নছাড়া কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কবি একটি পাতা ঝরে যাওয়া গাছের কথা বলেছেন। গাছটিতে আছে শুধু কয়েকটি আঁকাবাঁকা শুকনো ডাল। লতা পাতা নেই ছাল-বাকল নেই, এমনকি এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি বা সরসের সম্ভাবনাও নেই। এই কারণেই কবি গাছের কথা উল্লেখ করেও পরের পঙ্ক্তিতে গাছটিকে 'গাছের প্রেতচ্ছায়া' বলে অভিহিত করেছেন।
ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করো
বর্তমান -- √বৃৎ + শানচ্
ভদ্রতা -- ভদ্র + তা
সম্ভাষণ -- সম্ + √ভাষ্ + অনট্
গতি ---- √গম্ + ক্তি
ভিখারি -- ভিখ + আরি (ভিখারি > ভিখিরি)
ভব্যতা --- ভব্য + তা
রুষ্ট -- √রুষ্ + ক্ত
জিজ্ঞাসা -- √জ্ঞা + সন্ + অ + আ (জিজ্ঞাসা>জিজ্ঞেস)
নিচের শব্দগুলিতে ধ্বনি পরিবর্তনের কোন কোন নিয়ম কাজ করেছে তা দেখাও
জুতা > জুতো ---- স্বরসঙ্গতি
বাসিন্দা > বাসিন্দে --- স্বরসঙ্গতি
ক্ষেত্র > ক্ষেত --- র-কার লোপ
চক্ষু > চোখ --- অন্ত্য স্বরলোপ
কত দূর > কদ্দুর ---- সমীভবন
ভিখারি > ভিখিরি --- স্বরসঙ্গতি
কোন শব্দে কি উপসর্গ আছে আলাদা করে দেখাও
প্রতিশ্রুতি = প্রতি + শ্রুতি (প্রতি উপসর্গ)
বেওয়ারিশ = বে + ওয়ারিশ
অনুসরণ = অনু + সরণ
প্রচ্ছন্ন = প্র + ছন্ন
অভ্যর্থনা = অভি + অর্থনা
অধিকার = অধি + কার
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো
ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।(জটিল বাক্যে)
উঃ ওই পথ দিয়ে যখন ট্যাক্সি করে যাচ্ছিলাম তখন জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম।
দেখছেন না ছন্নছাড়া কটা বেকার ছোকরা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। (যৌগিক বাক্যে)
উঃ দেখছেন না ছন্নছাড়া কটা বেকার ছোকরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং আড্ডা দিচ্ছে।
ওরা কারা? (প্রশ্ন পরিহার করো)
উঃ ওদের পরিচয় জানতে চাইছি।
ঘেষবেন না ওদের কাছে। ( ইতিবাচক বাক্যে)
উঃ ওদের কাছে ঘেঁষা থেকে বিরত থাকুন।
একটা স্ফুলিঙ্গ হীন ভিজে বারুদের স্তূপ। (না সূচক বাক্যে)
উঃ একটা ভিজ বারুদের স্তূপে যাতে স্ফুলিঙ্গ নেই।
জিজ্ঞেস করলুম, তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে। (পরোক্ষ উক্তিতে)
উঃ আমি জিজ্ঞেস করলুম ওদের ট্যাক্সি লাগবে কিনা।
আমরা খালি ট্যাক্সি খুঁজছি। (জটিল বাক্যে)
উঃ আমরা এমন একটা ট্যাক্সি খুঁজছি যেটা খালি।
দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠেছে ফুল। (ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করো)
উঃ পুরাঘটিত বর্তমান।
তর ট ঝম মখ
ReplyDelete