আবহমান কবিতার আলোচনা

আবহমান কবিতার প্রশ্নোত্তর



কবি: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

মূল কাব্যগ্রন্থ: অন্ধকার বারান্দা

মূল ভাব: গ্রাম সভ্যতার চিরন্তনতা ও নাগরিক কবির গ্রাম জীবনে প্রত্যাবর্তনের বাসনা।

আবহমান কবিতার মূল বক্তব্য

আধুনিক বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা 'আবহমান' কবিতাটি আধুনিক নগরজীবনের ক্লান্তি ও সেই ক্লান্তির নিরাময়ে গ্রাম জীবনে ফিরে যাওয়ার আহ্বানকে সূচিত করেছে। এই কবিতাটি কবির লেখা 'অন্ধকার বারান্দা' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।


'আবহমান' কথার অর্থ হল চিরন্তন বা চিরকালীন। এই কবিতায় ফুটে উঠেছে গ্রাম জীবনের চিরন্তন সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য। আধুনিক পৃথিবীতে মানুষ ভোগবাদী জীবনের প্রলোভনে শহরমুখী হয়েছে। কিন্তু নাগরিক জীবন ভোগের উপকরণ দিতে পারলেও মানুষকে দিতে পারেনি অন্তরাত্মার শান্তি। এই শান্তির খোঁজে তাই তাকে ফিরে যেতে হবে গ্রামের সহজ সরল আড়ম্বরহীন জীবনে। গ্রামের প্রকৃতি প্রতি মুহূর্তে তাকে ডাকছে। সুদূর অতীত কালে এই গ্রাম থেকেই শুরু হয়েছিলো মানব সভ্যতার বিকাশ। আজ‌ও সেই গ্রাম-সভ্যতা নিজের সমৃদ্ধি ও সৌন্দর্য নিয়ে তেমনি রয়েছে। গ্রাম সভ্যতার জীবনতৃষ্ণা কোনোদিন ফুরাবে না। অনেকেই তাকে ছেড়ে গেছে, অনেকেই আবার ফিরে এসেছে। তাই ছেলেভুলানো গল্পের নটেগাছটি মুড়িয়ে গেলেও গ্রাম সভ্যতার নটেগাছটি বুড়িয়ে যায়, তবু মুড়িয়ে যায় না। অর্থাৎ এই সভ্যতা প্রাচীন হয়েছে, তবু প্রাণহীন হয়নি। তাই এখানেই ফিরতে হবে মানুষকে। এসে দাঁড়াতে হবে আবহমান উঠোনটিতে, লাউমাচাটির পাশে। একটি ছোট্ট ফুল দুলে দুলে চিরকাল ডাকবে আমাদের। তার কাছে যেতে বলবে চিরকাল।


প্রশ্ন: "যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া" - কবি কাদের কেন এই পরামর্শ দিয়েছেন?

উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি আধুনিক বাংলা ভাষার অন্যতম খ্যাতনামা কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা 'আবহমান' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আধুনিক নগরজীবনের ছুটোছুটিতে ক্লান্ত মানুষের প্রতি কবি এই পরামর্শ দিয়েছেন।


বিগত শতক থেকেই ভোগবাদী জীবনের টানে গ্রামের মানুষ ধীরে ধীরে শহরমুখী হয়েছে। গ্রাম ছেড়ে তারা বাসা বেঁধেছে শহরে। শহরের জীবন তাদের হয়তো কিছু ভোগের উপকরণ দিতে পেরেছে, কিন্তু যা দিতে পারেনি, তা হল অনাবিল শান্তি ও সৌন্দর্য। গ্রাম জীবনের চিরন্তন সৌন্দর্য আর অনাবিল শান্তি কবির মনে বার বার জাগিয়েছে প্রত্যাবর্তনের বাসনা। কবির সেই সুপ্ত বাসনাই এই কবিতায় বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে। কবি বিশ্বাস করেন, গ্রামের এই জীবন কোনোদিন‌ও প্রাণহীন হয় না। এই জীবন যত‌ই পুরোনো হোক, কখনও মুড়িয়ে যায় না। এখানে ফিরতে পারলেই মিলবে এক পরিপূর্ণ আনন্দময় জীবনের আশ্বাস। এখানেই আছে আধুনিক শহুরে মানুষের সমস্ত যন্ত্রণার সুনিশ্চিত নিরাময়। গ্রাম জীবনের এই চিরন্তন সৌন্দর্য, চিরন্তন শান্তির মধ্যেই ফিরে আসতে হবে। শহরের রুক্ষ কঠোর জীবনের ক্লান্তি মুছে এক মুঠো সুখের সন্ধান পেতে হলে আমাদের কাছে আর অন্য কোনো পথ নেই।

আবহমান কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো

কবিতার ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতার নামকরণের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে কবিতার গভীর তাৎপর্য। এখন আমরা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা 'আবহমান' কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করে দেখবো।


আবহমান কথাটির অর্থ হল চিরন্তন। 'আবহমান' কবিতায় কবি আধুনিক সভ্যতার এক গভীর সত্যকে তুলে ধরেছেন। আধুনিক নগর-জীবনের জটিলতায় ক্লান্ত মানুষ বেঁচে থাকার সুখ খুঁজে পায় না। ভোগবাদী জীবনের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে তারা কেবল ছুটে বেড়ায়। অন্য দিকে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ধীর স্থির গ্রাম্য জীবনে ভোগের উপকরণ না থাকলেও রয়েছে শান্তির উপকরণ। গ্রামের সরল সিধা জীবনের এই রূপ চিরকালীন। এই সভ্যতা পুরাতন, কিন্তু প্রাণহীন নয়। রূপকথার গল্পের নটেগাছটি মুড়িয়ে গেলেও পল্লী বাংলার জীবন কখনোই মুড়য় না। পল্লীবাংলার জীবনতৃষ্ণা কখন‌ও ফুরোয় না। বহু যুগ ধরে বহু মানুষ এই পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছে, ছেড়ে চলে গেছে, আবার ফিরেও এসেছে। এ ভাবেই যুগে যুগে বেঁচে আছে এই সভ্যতা। গ্রামজীবনের এই আবহমানতার কথাই 'আবহমান' কবিতায় উঠে এসেছে। তাই বলা যায় কবিতাটির নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক।

আর‌ও পড়ো

চিঠি রচনার প্রশ্নোত্তর

কোনি উপন্যাসের প্রশ্নোত্তর

Comments

Post a Comment

Popular Posts