কাণ্ডারী হুঁশিয়ার কবিতার সারাংশ | Kandari husiyar kabita

কাণ্ডারী হুঁশিয়ার কবিতার সারাংশ, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কাণ্ডারী হুঁশিয়ার কবিতাটি তাঁর সর্বহারা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। এটি নজরুল ইসলামের লেখা একটি অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা। অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা এই কবিতায় কবি ভারতের যুব সমাজ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন। পরাধীন জাতির কাছে স্বাধীনতাই যখন সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য, সেই সময়েও কিছু স্বার্থান্বষী মানুষ হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজকে দু টুকরো করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। চারিদিকে যখন চরম প্রতিকূল অবস্থা, সেই সময় সাম্প্রদায়িক বিভেদ, হানাহানি ও দাঙ্গার ফলে স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ আর‌ও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এ হেন পরিস্থিতিতে সংগ্রামী যুবসমাজের প্রতি কবির আহ্বান: "কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।" জাতির ভাগ্য যাদের উপর নির্ভর করে আছে, তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের হাল ধরার জন্য। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রাত্রিবেলা যেমন নৌকার হাল ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, যাত্রীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে, দেশের রাজনৈতিক আন্দোলন তথা সমগ্র জাতির ভবিষ্যতের অভিমুখ ঠিক করাও সেই সময়ে কঠিন হয়ে উঠেছিলো। জাতির কর্ণধারকে কবি মনে করিয়ে দিয়েছেন, "কাণ্ডারী, বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।" স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূতকে কবি মনে করিয়ে দিয়েছেন পলাশীর প্রান্তরে বাঙালির স্বাধীনতা হারানোর কথা। ওই গঙ্গার জলেই আবার বাঙালির রক্তে লাল হয়ে স্বাধীনতার নতুন সূর্য উঠে আসবে। এ যেন কর্ণধারের কাছেও হিন্দু মুসলিম ভেদাভেদের ঊর্ধে উঠে দেশের স্বার্থে লড়াই করার পরীক্ষা। তাই কবি বলেছেন "আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ।" দেশের জন্য লড়াই করতে গিয়ে যাঁরা ফাঁসির দড়ি গলায় পরে জীবনের জয়গান গেয়ে গেছেন, সেই মহান বিপ্লবীরাও আজ অলক্ষ্যে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের বলিদানের কথা কাণ্ডারী যেন ভুলে না যান।

কাণ্ডারী হুঁশিয়ার কবিতার প্রতি লাইনের সরল অর্থ


দুর্গম গিরি-কান্তার মরু দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার!
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার!

দুর্গম পার্বত্য অরণ্য, মরুভূমি বা দুর্লঙ্ঘ্য সমুদ্র, তাকে পার হতে হবে রাত্রি নিশীথে। তাই যাত্রীরা সাবধান। নৌকো দুলছে, জল ফুলে উঠছে, মাঝি পথ ভুলে যাচ্ছে, পাল ছিঁড়ে গেছে, এমন দুঃসময়ে দেশের হাল কে ধরবে? কার হিম্মৎ আছে? কে আছে এমন জোয়ান? ভবিষ্যতের ডাকে সাড়া দিয়ে কবি তাকে এগিয়ে আসতে বলছেন। দেশের এই দুঃসময়ে, ভরা তুফান অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে, নৌকাকে তীরে ভিড়াতে হবে।

তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান!
ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে, নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার!

রাত্রি অন্ধকার, তাই দেশমাতৃকার মন্ত্রে দীক্ষিত সৈনিকদের সাবধান থাকতে হবে। বহু যুগের সঞ্চিত ব্যথা আজ অভিযান ঘোষণা করেছে। বঞ্চিত মানুষের বুকে জমে থাকা অভিমান ফেনিয়ে উঠছে। এইসব সর্বহারা বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষকে সঙ্গে নিতে হবে, তাদের অধিকার দিতে হবে।

অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানেনা সন্তরণ,
কাণ্ডারী! আজি দেখিব তোমার মাতৃমুক্তিপণ!
“হিন্দু না ওরা মুসলিম?” ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কাণ্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!

অসহায় জাতি অত্যাচারের সমুদ্রে ডুবে মরছে, তারা সাঁতার জানে না। কাণ্ডারী, তুমি মাতৃভূমির মুক্তির যে ব্রত নিয়েছো, আজ তার পরীক্ষা। ওই কে যেন জানতে চাইছে "হিন্দু না ওরা মুসলিম?" কাণ্ডারী, তুমি বলো মানুষ ডুবছে, আমার মায়ের সন্তান।

গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গুরু গরজায় বাজ,
পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ
কাণ্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
‘করে হানাহানি, তবু চল টানি’, নিয়াছ যে মহাভার!

গিরিপথ ধরে চলতে হচ্ছে, যাত্রীরা ভয় পাচ্ছে, বজ্র গর্জন করছে, পিছিয়ে পড়া যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগছে। কাণ্ডারী, এমন সময় তুমি কি পথ ভুল করবে? পথের মাঝে এসে কি পথ ত্যাগ করবে? মানুষে মানুষে হানাহানি করছে, তবু এগিয়ে চলো, মহান দায়িত্ব নিয়েছো যে!

কাণ্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর
উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পুনর্বার।

কাণ্ডারী, তোমার সামনে ওই দেখো পলাশীর প্রান্তর। ওখানে বাঙালির রক্তে লাল হয়ে উঠেছিলো ক্লাইভের তরবারি। ওই গঙ্গায় ডুবেছে ভারতের সূর্য, সে সূর্য আবার উঠে আসবে আমাদের‌ই রক্তে লাল হয়ে।

ফাঁসির মঞ্চে যারা গেয়ে গেল জীবনের জয়গান,
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কাণ্ডারী হুঁশিয়ার!

যে মহান বিপ্লবীরা ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে গেছেন, তাঁরা আজ অলক্ষ্যে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রতি কোন বলিদান দেবে? আজ তোমার পরীক্ষা, জাতির ত্রাণ করবে, নাকি জাতপাতের। নৌকা দুলছে, জল ফুলে উঠছে, কাণ্ডারী, তুমি সাবধান।

Comments

  1. THANK YOU VERY VERY MUCH... THIS SUMMARY OF THE POEM HELPED ME FOR MY EXAMS A LOT..

    ReplyDelete
  2. no 1 brother. 1 er ko.

    ReplyDelete
  3. Thank you very much! It helped me a lot for the exam.

    ReplyDelete
  4. it's Helps me a lot Thank you so much 🥀

    ReplyDelete
  5. This is very helpful. Thanks for providing this💗

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular Posts