সংলাপ রচনার নিয়ম ও উদাহরণ | Sanglap rachana in Bengali
সংলাপ রচনা করার নিয়ম
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দশম শ্রেণির সিলেবাস ও অন্যান্য বোর্ডের বিভিন্ন শ্রেণিতে সংলাপ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্মিতি হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের শিখতে হয়। সংলাপ রচনা করার বেশ কয়েকটি নিয়ম আছে। আসুন জেনে নিই একটি সুন্দর সংলাপ রচনা করার জন্য কোন কোন নিয়ম মেনে চলতে হয়।
১: সংলাপের একটি শিরোনাম দিতে হয়। প্রশ্নে উল্লিখিত শিরোনামটি যথাসম্ভব অবিকৃত রেখে নামকরণ করতে হবে।
২: সংলাপে দু জন কাল্পনিক বক্তার নাম দিতে হয়। নিচে সংলাপ রচনার উদাহরণ দিয়েছি। সেখান থেকে এই বিষয়টি ভালো করে বোঝা যাবে।
৩: সংলাপের ভাষা হতে হয় সাবলীল। মানুষ যে ভাষায় কথা বলে, সংলাপে ঠিক সেই ভাষাটি ব্যবহার করতে হবে। কৃত্রিম জাঁকজমকপূর্ণ ভাষায় সংলাপ রচনা করা চলে না। আটপৌরে সাধারণ শব্দ দিয়ে সংলাপ রচনা করলে তা স্বাভাবিক ও সুন্দর হয়; তাতে পরীক্ষায় নম্বরও বেশি পাওয়া যায়।
৪: সংলাপের কথাগুলির যেন একটির সঙ্গে আর একটির যোগ থাকে। একজনের কথার পরিপ্রেক্ষিতে অপর বক্তার বক্তব্য উঠে আসবে। এলোমেলো কথোপকথন লিখলে চলবে না।
৫: সংলাপে দু জন বক্তার কথাতেই যেন যুক্তির বিন্যাস দেখা যায়। অযৌক্তিক ও খাপছাড়া বক্তব্য যেন না থাকে।
৬: একটি ৫ নম্বরের সংলাপে মোট ১৫০-১৭০টি শব্দ থাকবে। দু জন বক্তা মিলে কমপক্ষে ১০-১৫টি বক্তব্য লিখতে হবে। অর্থাৎ একজন বক্তার জবানিতে অন্তত ৬-৭টি বক্তব্য রচনা করতে হবে।
৭: সংলাপের শুরুতে সৌজন্যমূলক সম্বোধন দিয়ে কথোপকথনে প্রবেশ করতে হয়। সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পর এমন ভাবে এমন একটি পরিবেশ রচনা করতে হবে, যাতে সংলাপের মূল বিষয়ে প্রাসঙ্গিক ভাবে প্রবেশ করা যায়। হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে বিষয়ে ঢুকলে চলবে না। যেমন: বিষয় যদি হয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, তাহলে বাজারে দু জন ব্যক্তির দেখা হয়েছে, এমন একটি পরিবেশ রচনা করতে হবে।
৮: সংলাপের শুরুতে দু জন বক্তার মধ্যে মতের অমিল থাকলেও শেষে একমত করতে হবে, অন্যথায় অল্প সময়ে স্বাভাবিক ভাবে সংলাপ শেষ করা যাবে না।
৯: সংলাপের শেষে একটি ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে শেষ করতে হবে।
১০: সংলাপ শেষ করতে হবে এমন ভাবে, যাতে শেষটি স্বাভাবিক মনে হয়, আকস্মিক না মনে হয়। শেষে প্রয়োজন হলে বিদায় সম্বোধন-সূচক কথাবার্তা দেওয়া চলবে।
সংলাপ রচনার উদাহরণ
নিচে আমরা বর্তমান সময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংলাপ রচনার উদাহরণ দিলাম। এই সংলাপগুলি পড়ে এই ভাবে সংলাপ রচনার অনুশীলন করলে ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে সংলাপ রচনা করা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
পাশ ফেল নিয়ে সংলাপ রচনা
বরুণ: কী ভাই অরুণ, পরীক্ষার রেজাল্ট কেমন হয়েছে তোর?
অরুণ: আমার রেজাল্ট ভালো হয়নি ভাই। মোট ৬০% পেয়েছি, ইংরেজিতে কোনোক্রমে পাশ করেছি। ক্লাস এইট পর্যন্তই ভালো ছিলো, অন্তত পাশ ফেলের ভয় ছিলো না।
বরুণ: তা তুই ঠিকই বলেছিস, কিন্তু এই পাশ ফেল ছিলো বলেই না তুই এই বছর ভালো ভাবে পড়াশোনা করে ৬০% নিয়ে পাশ করলি। পাশ ফেল না থাকলে তো পড়তিস না।
অরুণ: সে তুই যাই বল, আমার মনে হয় পাশ ফেলের চাপ ছিলো না বলে ক্লাস এইট পর্যন্ত বেশ আনন্দের সঙ্গে পড়াশোনা করতে পেরেছি। ক্লাস নাইন থেকে ফেল করার চাপটা মাথার উপর ঝুলতে থাকে।
বরুণ: তা তুই ঠিকই বলেছিস, কিন্তু একটা সময় এসে যোগ্যতার পরীক্ষা তো দিতেই হবে। ক্লাস এইট পর্যন্ত আমরা ছোটো ছিলাম। এখন তো আর ছোটো বলা যায় না।
অরুণ: সেটা তুই ঠিকই বলেছিস। আমারও মনে হয় ক্লাস এইট পর্যন্ত পাশ ফেল না থাকলেও তার পর থেকে পাশ ফেলের দরকার আছে। নয়তো সবাই পড়াশোনা না করেই ডিগ্রি পেতে চাইবে।
বরুণ: একদম তাই। চল ভাই, এ বার বাড়ি ফিরতে হবে। ফেরার পথে নতুন ক্লাসের বইগুলোও কিনে নিতে হবে।
অরুণ: আচ্ছা, চল, একসঙ্গেই ফিরি। ভালোই হলো, তুই কী কী বই কিনছিস সেটাও দেখে নেবো।
সংলাপ রচনা: প্লাস্টিক দূষণ
বিনয়: কোথায় গেছলি উদয়?
উদয়: এই যে, বাজারে গিয়েছিলাম মাছ কিনতে।
বিনয়: এ কী, তোর হাতে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেখছি। বাড়ি থেকে একটা কাপড়ের থলি আনতে পারতিস তো!
উদয়: ব্যাগ খুঁজে বের করার সময় কোথায়! তা ছাড়া বাজারে এলেই যখন ক্যারিব্যাগ পাওয়া যাবে তখন আর অত ঝামেলা কে করে!
বিনয়: তুই তো একেবারেই অসচেতন মানুষের মতো কথা বলছিস। একজন শিক্ষিত ছেলে হিসেবে তোর জানা উচিত প্লাস্টিকের অতিরিক্ত ব্যবহার কী ভাবে আমাদের পরিবেশের ক্ষতি করছে। প্লাস্টিক মাটির উর্বরতা কমায়, ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি করে, ড্রেনের মুখ বন্ধ করে জলনিকাশে বাধা দেয়। এমনি আরও কত ক্ষতি করে।
উদয়: ও সব কথা তো বইয়ে লেখা আছে। বইয়ে তো কত কিছুই লেখা আছে। কজনই বা সে সব মেনে চলে?
বিনয়: মেনে চলে না বলেই তো আজ গোটা পৃথিবী দূষণে আক্রান্ত। টিভিতে খবর দেখছিস তো? দিল্লি শহরের বাতাস নিঃশ্বাস নেওয়ার যোগ্য নেই। ওরা আজ বুঝতে পারছে দূষণের কথাগুলো শুধুমাত্র বইয়ে লেখা কথা নয়, এগুলো সত্যিকারের সমস্যা। আমরা ছাত্ররাই যদি সচেতন না হই, তাহলে অন্যদের কথা তো বলাই উচিত নয়। যাই হোক, আজকের মতো যা করেছিস করেছিস, ভবিষ্যতে আর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করিস না।
উদয়: তোর কথাটা ভেবে দেখার দরকার আছে। আমি এতটা গভীর ভাবে বিচার করে দেখিনি আগে।
বিনয়: যাই হোক, এ বার একটু গভীর ভাবে বিচার করিস।
উদয়: ঠিক আছে ভাই, আজ চলি।
বিনয়: হ্যাঁ, আমারও যাওয়ার সময় হলো।
আরও পড়ো
ধন্যবাদ
ReplyDeleteThanks🙏
Delete