অনুচ্ছেদ রচনা
অনুচ্ছেদ রচনার নিয়ম ও উদাহরণ
অনুচ্ছেদ রচনা তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুচ্ছেদ ও প্রবন্ধ এক নয়, এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কৌতুহল থাকলে প্রবন্ধ রচনার নিয়মগুলি পড়ে নিতে পারেন। অনুচ্ছেদ রচনারও কয়েকটি নিয়ম আছে। নিয়মগুলি মেনে চললে খুব সহজেই ভালো অনুচ্ছেদ রচনা করা যাবে। আসুন জেনে নিই অনুচ্ছেদ রচনা করার জন্য কোন কোন নিয়ম মেনে চলতে হয়।
১: অনুচ্ছেদ সব সময় একটি প্যারাগ্রাফে লিখতে হবে। অনুচ্ছেদ কথার অর্থই হলো প্যারাগ্রাফ। তাই একটি অনুচ্ছেদ মানেই একটি প্যারাগ্রাফ। একাধিক প্যারা করে লেখা চলবে না।
২: অনুচ্ছেদে কোনো পয়েন্ট দেওয়া চলে না। ভূমিকা ও উপসংহার আলাদা করে লিখতে হয় না। একটি অনুচ্ছেদের মধ্যেই সবকিছু লিখতে হয়।
৩: অনুচ্ছেদের শুরুতে একটি নামকরণ করতে হয়। প্রশ্নে যে নামটি থাকবে, সেই নামটি দিয়েই নামকরণ করা ভালো। তবে নামটি একটু বদলে সুন্দর করতে পারলে অসুবিধা নেই।
৪: অনুচ্ছেদ সহজ সরল ও সহজবোধ্য ভাষায় লিখতে হয়। অনুচ্ছেদের বাক্যগুলি ছোটো ছোটো হওয়া উচিত। বড় বড় বাক্য লিখতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে।
৫: অনুচ্ছেদ সব সময় মান্য চলিত ভাষায় লিখতে হবে। সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ কোনো মতেই করা চলবে না।
৬: ভাষার শুদ্ধতা ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে হবে। বানানে নজর দিতে হবে। বাক্যের গঠন যেন ঠিক থাকে।
৭: অনুচ্ছেদে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। ভুল ও কাল্পনিক তথ্য বা অসম্ভব তথ্য দেওয়া চলবে না।
৮: অনুচ্ছেদের লেখাটি যুক্তিপূর্ণ হতে হবে। অযৌক্তিক কথাবার্তা লেখা চলবে না।
৯: অনুচ্ছেদের শব্দসীমা প্রশ্ন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি অনুচ্ছেদ ১৫০-২০০ শব্দের বেশি হয় না।
অনুচ্ছেদ রচনা: শীত কাল
ভারতবর্ষের ঋতুচক্রে ষড়ঋতুর মধ্যে পঞ্চম ঋতু হল শীত। পৌষ ও মাঘ, এই দুই মাস নিয়ে শীত ঋতু। ইংরেজি হিসেবে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টিই শীতকাল। আশ্বিনে দুর্গোৎসবের পরেই তাপমাত্রার পারদ দ্রুত নামতে থাকে। কার্তিক-অগ্রহায়ণে তেমন একটা শীত থাকে না। এরপর পৌষ মাস এসে গেলেই শুরু হয় কাঁপুনি দেওয়া শীত। বিশেষত বাঙালির জীবনে এই শীত ঋতুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। এই সময় কৃষিজীবী বাঙালির ঘরে অন্নের অভাব দূর হয়। ঘরে ঘরে বিরাজ করে সমৃদ্ধির লক্ষণ। সেই সমৃদ্ধির উদযাপনের জন্যই এই সময় অনুষ্ঠিত হয় একের পর এক উৎসব। শীত কালে নানা ধরনের শাক সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়, ফলে খাদ্যদ্রব্যের দামও কম থাকে। নবান্ন থেকে শুরু করে পৌষ পার্বণ পর্যন্ত একের পর এক উৎসব এই সময় অনুষ্ঠিত হয়। শীতের প্রতিটি উৎসবেই খাওয়া দাওয়া একটি প্রধান অঙ্গ। নবান্নের নবব্যঞ্জন ও পৌষ পার্বণের পিঠেপুলি এই ঋতুর বিশেষ আকর্ষণ। নলেন গুড়ের সন্দেশ, পায়েস ও পিঠে শীত কালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাবার। উৎসব ছাড়াও এই সময়টা হলো বাঙালিদের কাছে পিকনিকের মরসুম। ইংরেজি বড়দিন উপলক্ষে ২৫শে ডিসেম্বর থেকে নতুন বছরের পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত পিকনিকের ধুম পড়ে যায়। এই সময় তরুণ প্রজন্ম আনন্দে হুল্লোড়ে মেতে ওঠে। একদিকে বড়দিনের আয়োজন আর অন্য দিকে পিকনিকের হুল্লোড়ে আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে গ্রাম থেকে শহর। বাংলার বেশ কিছু এলাকায় শীত কালে টুসু পরব পালিত হয়। এটি বাংলার লোকসংস্কৃতির এক বিশেষ অঙ্গ। গ্রামাঞ্চলে এই সময় যাত্রাপালার আসর বসে। এই সময়টি ছাত্রছাত্রীদের জন্য পড়াশোনার সময়, কারণ এই শীতেই অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা ও নতুন শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া। শীতকালে আবহাওয়া যেমন ঠাণ্ডা থাকে, তেমনি এই সময় হাওয়া থাকে শুষ্ক ও রুক্ষ। তাই এই সময় ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে হয়। এ সময় বাজারে প্রচুর কমলালেবু উৎপাদিত হয়। বিভিন্ন ফুলের মধ্যে এই সময় সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নানা জাতের গাঁদা ফুল। শীতকালে মোটের উপর রোগ ব্যাধি কম হয়। তবে ছোটোখাটো ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর সর্দি এই সময় একটু বেশিই হয়।
অনুচ্ছেদ রচনা: করোনা ভাইরাস
চীনের উহান প্রদেশে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নতুন এক ধরনের নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেন এই রোগের পিছনে রয়েছে করোনা ভাইরাসের এক নতুন প্রজাতি, যার পোশাকি নাম SARS COV 2 বা নভেল করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাস মানব দেহের শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে। মূলত মুখ ও নাকের মধ্য দিয়ে ঢুকে ফুসফুসের সংক্রমণ ঘটানোই এই ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য। এই ভাইরাসের আক্রমণে যে রোগ হয়, বিজ্ঞানীরা তার নামকরণ করেন COVID 19 বা করোনা ভাইরাস ডিজিজ ১৯। ২০১৯ সালে প্রথম দেখা যায় বলে রোগের নামে এই সংখ্যাটি যুক্ত হয়। এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল জ্বর, কাশি, গলায় ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়া, দুর্বলতা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। সংক্রমণ বেশি হলে তীব্র শ্বাসকষ্ট হয় ও তা থেকে মৃত্যু হবার সম্ভাবনা আছে। এই নভেল করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে বড়ো বৈশিষ্ট্য হলো এর অতিরিক্ত সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা। কথা বলার সময় বা হাঁচি কাশির ফলে আমাদের মুখ থেকে লালার যে ছোটো ছোটো টুকরো বা ড্রপলেট বের হয়, তার মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির লালারসে এই ভাইরাস থাকে ও তা এইভাবে সুস্থ মানুষের দেহে পৌঁছে যায়। এই রোগের আকস্মিক প্রাদুর্ভাব ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই গোটা পৃথিবীর প্রায় সব দেশ করোনা ভাইরাসের কবলে পড়ে যায়। এই রোগের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মুখে মাস্ক ব্যবহার করা ও নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সুষম আহার ও নিয়মিত শরীরচর্চা। সংক্রমণ রোধ করার জন্য বিভিন্ন দেশে লক ডাউন ঘোষণা করে জনজীবনকে স্তব্ধ করে দিতে হয়। ইতালি, কানাডা, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে থাকে। ভারতও পিছিয়ে থাকে না। ভারতেও নভেম্বর ২০২০র মধ্যে ৯৫ লক্ষ মানুষের দেহে এই ভাইরাস ধরা পড়ে। বাংলাদেশে নভেম্বর ২০২০র মধ্যে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। গোটা পৃথিবীর মোট সাড়ে ছয় কোটি মানুষ এক বছরের কম সময়ে এই রোগে আক্রান্ত হন। এই সময়ের মধ্যেই মৃত্যু হয় ১৫ লক্ষের বেশি। এই রোগে মৃত্যুর হার ২ থেকে ৩ শতাংশ হলেও সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। করোনাকে রোধ করার জন্য লক ডাউন ঘোষণা করার ফলে গোটা পৃথিবীর ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু মানুষ কাজ হারান। অনেক মানুষকে চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে যাবার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিজ্ঞানীরা এই রোগের টীকা আবিষ্কারের চেষ্টা করে চলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, টীকা আবিষ্কারের পরেও পৃথিবীর সব মানুষকে টীকা দিয়ে উঠতে বহু বছর সময় লেগে যাবে। আমরা জানি না মানব সভ্যতা আর কত দিন পর এই ভাইরাসের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
আরও পড়তে সূচিপত্র দেখুন
Comments
Post a Comment