প্রলয়োল্লাস কবিতার আলোচনা

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্নোত্তর


প্রলয়োল্লাস কবিতার সারাংশ

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় পরাধীন ভারতের প্রেক্ষাপটে বৈপ্লবিক ভাবধারার জয়গান গাওয়া হয়েছে। পশ্চিমি দুনিয়ায় বিপ্লবের সাফল্যের পর বিপ্লবী আদর্শে আস্থাশীল কবি আশা প্রকাশ করেছেন ভারতের মাটিতেও বিপ্লবের আগমন ঘটতে চলেছে। বিপ্লবের সাথে অনিবার্য ভাবে জড়িয়ে থাকে ধ্বংস। এই ঘুণ ধরা সমাজের যা কিছু জীর্ণ, যা কিছু অন্যায়, তাকে ধ্বংস করে বিপ্লব গড়ে তোলে এক নতুন সমাজ। এই কবিতায় কবি বিপ্লবকে তুলনা করেছেন প্রলয়ের দেবতা মহাদেবের সঙ্গে। প্রলয়ের দেবতা মহাদেব যেমন পাপপূর্ণ বিশ্বকে ধ্বংস করে নতুন সৃজনের বীজ বপন করেন, বিপ্লব‌ও তেমনি শোষণ, অসাম্য আর অত্যাচারের ব্যবস্থাকে সমূলে ধ্বংস করে এক সাম্যবাদী আদর্শ সমাজের ভিত্তি প্রস্তুত করবে‌। তাই দেশবাসীর প্রতি কবি আহ্বান জানিয়েছেন "তোরা সব জয়ধ্বনি কর"। এই বাক্যটিকে কবিতায় বার বার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিপ্লবের প্রতি ভারতবাসীর আস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। শান্তিপ্রিয় ভারতবাসী যাতে বিপ্লবের ধ্বংসলীলা দেখে ভীত সন্ত্রস্ত না হয়ে পড়ে, তারা যেন বিপ্লবকে সাদরে বরণ করে নেয়, তার জন্য‌ই কবির এই আহ্বান। কবি বিশ্বাস করেন বিপ্লবের ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়েই নতুন সমাজ গড়ে উঠবে, উঠে আসবে স্বাধীনতার নতুন সূর্য। 

মাধ্যমিক ২০২১ এর জন্য সকল বিষয়ের সাজেশন ব‌ই কিনতে এখানে ক্লিক করো।

১: প্রশ্ন: প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন"- কথাটির সরলার্থ কী? কবি এই কথা কেন বলেছেন কবিতা অনুসারে আলোচনা করো।



উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা 'প্রলয়োল্লাস' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

উদ্ধৃত কথাটির সরল অর্থ : প্রলয় হল নতুন সৃষ্টির বেদনা।

বিপ্লববাদী কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলম ধরেছিলেন নিপীড়িত মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য। পরাধীন ভারতবর্ষের মানুষের মুক্তির জন্য বিপ্লবী ভাবধারা যখন ভারতবর্ষে আসতে শুরু করেছে তখন কবি নিজের দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, তারা যেন বিপ্লবকে জয়ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানায়। মহাদেব যেমন পাপপূর্ণ পৃথিবীকে ধ্বংস করে নতুন সৃষ্টির বীজ বপন করেন, ঠিক তেমনি ভাবে বিপ্লব‌ও আসছে ভারতবর্ষের সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন এক সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু বিপ্লব কখনো শান্তিপূর্ণ হয় না। বিপ্লব মানেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। শান্তিকামী ও নিরীহ ভারতবাসী যাতে বিপ্লবের ধ্বংসলীলা দেখে ভয় না পায়, তাই কবি তাদের সাহস দিয়ে বলেছেন, "ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? -- প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!" অর্থাৎ, বিপ্লবের ধ্বংসলীলা দেখে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এই ধ্বংস আসলে নূতন সৃষ্টির‌ই সূচনা।


২: প্রশ্ন: প্রলয়োল্লাস কবিতাটিকে রূপকধর্মী কবিতা বলা যায় কিনা আলোচনা করো।


উত্তর:    কাজী নজরুল ইসলামের লেখা অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় আমরা দেখতে পাই কবি এক প্রলয়ঙ্কর শক্তির আগমনের পূর্বাভাস দিয়েছেন। এই শক্তিকে কবি কখন‌ও কালবৈশাখী আবার কখনও প্রলয়ের দেবতা মহাদেব তথা ভৈরব নামে অভিহিত করেছেন। পৃথিবী পাপে পরিপূর্ণ হলে প্রলয়ের দেবতা মহাদেব পাপপূর্ণ পৃথিবীকে ধ্বংস করে নতুন পৃথিবী নির্মাণ করেন। প্রলয়োল্লাস কবিতায় কবি তাঁর দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন তারা যেন এই প্রলয়ঙ্কর ভৈরবকে জয়ধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানায়।


           কবির বর্ণিত এই শক্তি হল বিপ্লব। পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের জন্য, শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য সেই সময় বিপ্লবের আগমন ঘটেছিল। দেশের সাধারণ মানুষের কাছে তাই কবি আবেদন করেছেন তারা যেন বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করার জন্য জয়ধ্বনি দিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। দেশবাসীকে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, বিপ্লবের ধ্বংসলীলা দেখে তারা যেন ভয় না পায়। ধ্বংস করা বিপ্লবের লক্ষ্য নয়। বিপ্লবের লক্ষ্য হল শোষণমুক্ত সাম্যবাদী সমাজ। এই কথাগুলিই কবি রূপকের আশ্রয়ে প্রকাশ করেছেন। তাই প্রলয়োল্লাস কবিতাটিকে রূপকধর্মী কবিতা বলা যায়।

৩: প্রশ্ন: প্রলয়োল্লাস কবিতায় কবি বিপ্লবকে মহাদেবের সঙ্গে তুলনা করেছেন কেন?

কাজী নজরুল ইসলামের লেখা প্রলয়োল্লাস কবিতায় কবি বিপ্লবকে মহাদেবের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পরাধীন জাতির জীবনে স্বাধীনতার আলো জ্বালানোর জন্য বিপ্লব আসছে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো। এই বিপ্লবকে মহাদেবের সঙ্গে তুলনা করার কারণ হলো: হিন্দু ধর্ম মতে মহাদেব হলেন বিনাশের দেবতা। পৃথিবী যখন পাপে পরিপূর্ণ হয়, মহাদেব তখন প্রলয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে পাপপূর্ণ জগৎকে ধ্বংস করেন এবং সেই ধ্বংসের ভিতর থেকেই জেগে ওঠে নতুন সৃষ্টি।

অত্যাচার, বৈষম্য, পরাধীনতা ও শোষণের নাগপাশ থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য যে বিপ্লব এগিয়ে আসছে, সেও মহাদেবের মতোই পুরাতন ব্যবস্থাকে সমূলে ধ্বংস করবে। অত্যাচার ও শোষণের বিনাশ না হলে সাম্যবাদী স্বাধীন দেশ গড়ে উঠবে না। বিপ্লবের প্রলয় নৃত্যে ব্রিটিশ শাসনের জগদ্দল পাথর টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ভারতবর্ষের বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে এক সাম্যবাদী শোষণমুক্ত সমাজ। এ যেন ঠিক মহাদেবের প্রলয়ের‌ই মতো ঘটনা। তাই প্রলয়োল্লাস কবিতায় মহাদেবের সঙ্গে বিপ্লবের তুলনাটি গভীর ব্যঞ্জনাময় ও সার্থক হয়ে উঠেছে।

“তোরা সব জয়ধ্বনি কর! ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়।” —উদ্ধৃতাংশটি কোন কবিতার অন্তর্গত? কবি এই কবিতায় নতুনের আগমনকে যে যে স্বরূপে প্রত্যক্ষ করেছেন, তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উদ্ধৃত অংশটি কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা 'প্রলয়োল্লাস' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য কবিতায় পরাধীন দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও শোষিত মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে বিপ্লবের আগমনকে রূপক ও ইঙ্গিতের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়েছে। বিপ্লবকে কবি 'নূতন' বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন নূতনের আগমনের মাধ্যমে জীর্ণ হয়ে পড়া পুরাতনের ধ্বংস হবে। এই কবিতায় কবি নূতনকে বেশ কয়েকটি প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। কালবৈশাখী ঝড় এবং প্রলয়ের দেবতা মহাদেব, মূলত এই দুটি প্রতীকের সাহায্যেই কবি বিপ্লবের আগমনকে প্রতীকায়িত করেছেন। কালবৈশাখী ঝড় যখন আসে, তখন সে জীর্ণ শুষ্ক প্রকৃতির ধুলো ময়লাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় নিজের সঙ্গে এবং নতুন বৃষ্টিধারার মধ্য দিয়ে প্রকৃতিতে এক নবীন সজীবতার সঞ্চার করে। আবার প্রলয়ের দেবতা মহাদেব পাপ-পূর্ণ পৃথিবীকে ধ্বংস করে নতুন পৃথিবী সৃজনের প্রেক্ষাপট নির্মাণ করেন। এক‌ই ভাবে কবি আশা করেন বিপ্লবের ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়ে শোষণ আর বৈষম্যের সমাজব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে নতুন সাম্যবাদী সমাজ গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। 

YouTube-এ বাংলা ব্যাকরণ শিখতে আমাকে সাবস্ক্রাইব করার জন্য এখানে ক্লিক করো।

কোনো বিশেষ প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য কমেন্ট করে জানাও। আমি সেই উত্তরটি যোগ করে দেবো। ভবিষ্যতের সমস্ত পোস্ট সম্পর্কে নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য ইমেইল আইডি দিয়ে সাবস্ক্রাইব করো। পেজের উপরে SUBSCRIBE বাটনে টাচ করে ইমেইল ঠিকানা দাও।
অন্যান্য টপিক দেখো 



Comments

  1. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর! ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখির ঝড়।” —উদ্ধৃতাংশটি কোন কবিতার অন্তর্গত? কবি এই কবিতায় নতুনের আগমনকে যে যে স্বরূপে প্রত্যক্ষ করেছেন, তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। give this question's answer

    ReplyDelete
  2. দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায় --লাইনটির অর্থ কী ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. দিগন্ত শব্দের অর্থ হলো আকাশ ও পৃথিবীযে সীমানায় মিলিত হয়েছে।
      এখানে বিশ্বজগৎ কে বোঝানো হয়েছে। কাঁদন শব্দের
      অর্থ হলো
      কান্না
      ভারতবাসীর দুঃখ বেদনা যন্ত্রণা কে বোঝানো হয়েছে।

      লাইনটির অর্থ হল মহাদেব শিব তার পিঙ্গল বর্ণের জটা জটা বিস্তৃত করি সমগ্র ভারতবাসীর দুঃখ-বেদনার ব্যতীত হয়েছেন এবং রুদ্র রূপ ধরে ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছেন এখানেই শিব রূপী
      ভারতীয় তরুণ বিপ্লবী শক্তি কথা বলা হয়েছে।

      Delete
  3. 'বিন্দু তাহার নয়ন জলে '- নয়ন জলে কী দেখা যায়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. সপ্ত মহা সিন্ধু অর্থাৎ কবি মহাকালের বিশালতা বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, মহাকালরূপী মহাদেবের কেবল মাত্র এক বিন্দু নয়নের জল পুরো বিশ্বের সপ্ত মহা সিন্ধুর সমান। তাঁর এক বিন্দু নয়নের জল পড়া সময় সেই সপ্ত মহা সিন্ধু দুলে উঠছে।

      Delete
  4. Please Aktu bole din taratari amar kalke exam to tai

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular Posts