মাধ্যমিক রচনা | Madhyamik rachana

মাধ্যমিক বাংলা বিষয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা

এই পোস্টে যে রচনাগুলি আছে


মাধ্যমিক ২০২০-তে যে রচনাগুলি পড়েছিলো
১: বিজ্ঞানের ভালো মন্দ
২: একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
৩: পরিবেশ: সমস্যা ও সমাধান
৪: খেলাধূলা ও ছাত্রসমাজ

২০২১ এর জন্য এইগুলি বাদে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো।

 শিক্ষায় মাতৃভাষার গুরুত্ব

ভূমিকা


সত্যেন্দ্রনাথ বসুর মতো মহান বিজ্ঞানী মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বর্তমান যুগে আমাদের দেশে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের বাড়বাড়ন্ত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মাতৃভাষা স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে ক্রমশ অবহেলিত হচ্ছে। তাই বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুবিধাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

বোধগম্যতা:


মাতৃভাষা হল শিশুর প্রথম ভাষা। তাই এই ভাষাটিই একটি শিশু সবচেয়ে সহজে বুঝতে পারে ‌। মাতৃভাষায় শিক্ষা দিলে শিশু সহজেই শিক্ষণীয় বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা গড়ে তুলতে পারে। মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষায় শিক্ষা দিলে শিশুরা প্রথম দিকে বোঝার পরিবর্তে মুখস্থ করার দিকে ঝুঁকে পড়ে। এই প্রবণতা শিশুর ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। ধারণাবিহীন মুখস্থ বিদ্যা ব্যক্তিত্ব বিকাশের পক্ষে বাধা হয়‌। 


ভাব প্রকাশ: 


পড়াশোনার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী যা শেখে তা যদি সে সহজ ভাষায় বলে বা লিখে প্রকাশ করতে না পারে, তবে সেই শিক্ষা অনেকখানি ব্যর্থ হয়। ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প নেই। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় ভাব প্রকাশ করতে হলে অনুবাদের আশ্রয় নিতে হয়। তখন সেই ভাব প্রকাশ সাবলীল ও সুন্দর হয় না। 


চিন্তাশক্তির বিকাশ:


মানুষ চিন্তাশীল প্রাণী। চিন্তা করার ক্ষমতাই তার অমূল্য সম্পদ। চিন্তনের প্রক্রিয়াটি সচরাচর মাতৃভাষার মাধ্যমেই হয়ে থাকে। মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীদের পক্ষে চিন্তা করার কাজটি সহজ হয়ে যায়। তখন তার শেখার ভাষা ও চিন্তার ভাষা আলাদা হয় না। ফলে তার চিন্তাশক্তি দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়। 


ব্যক্তিত্বের বিকাশ:


শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিত্বের বিকাশ। ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় পরিবার, পরিবেশ ও বিদ্যালয়ের প্রভাবে। মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করলে নিজের বসবাসের পরিবেশ ও বিদ্যালয়ের পরিবেশে শিক্ষার্থী এক‌ই ভাষার অনুশীলন করার সুযোগ পায়। ফলে তার বৌদ্ধিক জগতে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় না। তখন সে উভয় পরিবেশেই সহজ ভাবে মেলামেশা করতে ও কথাবার্তা বলতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব স্বাভাবিক ভাবে বিকশিত হতে পারে।


সাংস্কৃতিক বিকাশ:


মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা নিজের ভাষা ও নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হয়। ভাষার সাথে সংস্কৃতির যোগাযোগ অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। নিজের রাজ্যের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে জানার জন্য ও উপলব্ধি করার জন্য মাতৃভাষার চেয়ে ভালো মাধ্যম পাওয়া যায় না। বিশেষ করে দেশজ লোকসংস্কৃতির সাথে পরিচিত হ‌ওয়ার জন্য মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের লোকসংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আধুনিক শিক্ষিত সমাজ এই সংস্কৃতি থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে।


উপসংহার: 


বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ইংরেজির মতো আন্তর্জাতিক ভাষা জানা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করলেও ইংরেজি শেখা দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়। বরং মাতৃভাষার মাধ্যমেই বিদেশি ভাষা সহজে শিক্ষা করা যায়। তাই যাঁরা মনে করেন ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা না করলে ইংরেজিতে পিছিয়ে পড়তে হবে, তাঁরা ইংরেজি শেখার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে শিক্ষার্থীর সমগ্র শিক্ষার‌ই ক্ষতি করছেন।


বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ

বন ও বন্যপ্রাণী

২০২১ সালের মাধ্যমিকের জন্য এই রচনাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সূচনা 

 মানুষের জন্ম থেকেই অরণ্য তার পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । অরন্যের ডাকেই ধরিত্রীর প্রথম ঘুম ভেঙ্গে ছিল । দিকে দিকে প্রচারিত হয়েছিল জীবনের মহিমা । ভারতীয় সভ্যতা অরণ্য কেন্দ্রিক সভ্যতা, অরণ্যের কোলেই মানুষ গড়ে তুলেছিল তার প্রথম বাসস্থান । অরণ্য দিয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, প্রাণের নিঃশ্বাস, আশ্বাস ।

অরণ্য উচ্ছেদ 

কালের বিবর্তনে সভ্যতার বিজয় রথ যত এগিয়েছে ততই সভ্যতা হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক । যন্ত্রই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে । যন্ত্রদানবের প্রভাবে অকাতরে অরণ্য নিধন চলছে অহরহ । অরণ্য হটাও, বসতি বানাও, এই বিধানে এই যান্ত্রিক সভ্যতা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে । বৃক্ষ আজ লাশকাটা ঘরে আবদ্ধ । সবুজের ক্ষেত্রে এখন বহুতল আবাসন । অরণ্যকে ধ্বংস করে বড় বড় কলকারখানা আবাসন গড়তে ব্যস্ত আজকের মানুষ । যে বৃক্ষ ছিল মানুষের পরম বন্ধু সুহৃদ সেই বৃক্ষের উপর চলছে অকথ্য অত্যাচার, উচ্ছেদ । সবুজ বনানীর জায়গায় আজ ইট-কাঠ কংক্রিটের জঙ্গল গড়ে উঠেছে ।

অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা

 মানুষের জন্মলগ্ন থেকেই অরণ্য প্রকৃত বন্ধুর মত পাশে থেকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান যুগিয়েছে । নিঃশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন যোগান দিয়েছে । দূষণের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছে মানব সভ্যতাকে । মাটিকে আঁকড়ে রেখে ভূমিক্ষয় রোধ করেছে । বৃষ্টি নামিয়ে ধরিত্রীকে শস্য শ্যামলা করেছে যে অরণ্য সেই অরণ্যের প্রতি মানুষের অকথ্য অত্যাচার, উৎপীড়নের শেষ নেই । যথেচ্ছ ভাবে গাছগাছালি কেটে ফাঁক করে দিচ্ছে । উচ্ছেদ হচ্ছে বন বনানী । এই অপব্যবহারের ফল ও মানুষ কে ভুগতেও হচ্ছে । প্রকৃতিতে নানা রকম পরিবর্তন ঘটছে । সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না । গরমে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে । এক ফোটাবৃষ্টির জন্যে প্রাণিকুল হা হা করে মরে । বর্তমানে নানা রকম দূষণের কবলে মনুষ্য সমাজ জর্জরিত । এই সব কিছুর মূলে রয়েছে অরণ্যের অভাব ।

অরণ্য সংরক্ষণ

প্রকৃতির এই শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মানুষের মুখেই আবার ধ্বনিত হচ্ছে ‌"দাও ফিরে সে অরণ্য লহ এ নগর" সবুজের অভিযান অর্থাৎ বৃক্ষরোপণে মানুষকে সচেষ্ট হতে হবে বেশি করে । জেলায় জেলায় বৃক্ষরোপণ উৎসব পালিত হচ্ছে, মানুষকে বৃক্ষপ্রেমিক করে তোলার প্রয়াস চলছে । বন উন্নয়নের জন্য central forestry commission তৈরি হয়েছে । যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, গ্রামে-গঞ্জে গাছপালার চারা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ

 গাছের সঙ্গে সঙ্গে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে - যার যেখানে থাকার কথা সে সেখানে থাকলেই সব কিছু ঠিক ঠাক থাকে । বন্যপ্রাণী অর্থাৎ বাঘ, সিংহ, হাতি দুবেলা যদি শিকারীর অত্যাচারে উৎপীড়িত হয় তখন তারাও মনুষ্য সমাজে ঢুকে ক্ষয় ক্ষতি করে । এদের উপর অত্যাচার বন্ধ করা একান্ত প্রয়োজন । তাহলেই সমস্ত ভারসাম্য বজায় থাকবে ।

উপসংহার



 মানুষ এখনো বৃক্ষনিধন কর্ম থেকে বিরত হয়নি । এখনোও অকাতরে নিজের সুখের প্রয়োজনে বহু মূল্যবান গাছ-গাছালি কেটে ফেলছে । মানুষকে বুঝতে হবে গাছ আমাদের পরম বন্ধু । আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমরা একান্তভাবেই গাছের উপর নির্ভরশীল । একটি গাছ মানে একটি প্রাণ আর বৃক্ষ হত্যা মানেই নিজেকে হত্যা এই উপলব্ধি দরকার । সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে বনভূমি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই, এই সত্যকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি এও মনে রাখতে হবে যে  বন ও বন্যপ্রাণী অবাধে ধ্বংস হতে থাকলে পৃথিবীর ভারসাম্য বিপন্ন হবে। তাই অরণ্য ধ্বংসের বিকল্প পথের সন্ধান করতে হবে। বনভূমির স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যকে প্রতিষ্ঠা দিতে হবে। মানুষের সভ্যতা আর বনভূমির স্বাধীনতা পাশাপাশি চলুক, হাতে হাত মিলিয়ে।

 কুসংস্কার ও বিজ্ঞানচেতনা


এই রচনাটি মাধ্যমিক ২০২১ এর জন্য ইম্পোর্ট্যান্ট।

ভূমিকা  

প্রাচীনকালে গৃহবন্দী মানুষ আত্মরক্ষার জন্য এবং প্রকৃতির রোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছে । নিজের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি এবং বিচারবোধ থেকে সে ক্রমশ প্রকৃতির স্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছে । জানতে পেরেছে প্রত্যেকটি ঘটনার পিছনে কিছু কারণ থাকে । এই কারণগুলো বোঝার মতো মেধা ও মানসিকতা সবার থাকে না । যাদের থাকে না তাদের মধ্যে অজ্ঞতার অন্ধকার বা অন্ধ বিশ্বাসের জন্ম হয় । সেখান থেকেই শুরু হয় বিজ্ঞান চেতনা ও কুসংস্কারের সংঘাত ।

আধুনিকতা ও বিজ্ঞান চেতনা

 দীর্ঘদিন ধরে অনলস অনুশীলনের ফলে মানুষ জগৎ ও জীবনের অনেক রহস্যের সমাধান সূত্র জানতে পেরেছে । বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়েই নতুন অবস্থার সৃষ্টি হয় । বিজ্ঞান সত্য নির্ভর জ্ঞান । বিজ্ঞান আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মত । তার কাছে যা চাওয়া যায়, তাই পাওয়া যায় । প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বিদ্যুৎ । যে বিদ্যুতের সাহায্যে উৎপাদনে, শিল্পে, চিকিৎসায় সর্বত্র ঘটিয়েছে বিপ্লব । বিজ্ঞান নির্ভর প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে নিত্যনতুন যানবাহন তৈরি হয়েছে যেমন মোটরগাড়ি, ট্রেন, এরোপ্লেন যা দুরকে করেছে নিকট । আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিজ্ঞান নির্ভর । কিন্তু এখনও অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার সমাজ থেকে একেবারে দূর হয়নি । অদৃষ্টবাদী, অলৌকিকে বিশ্বাসী মানুষের কাছে বিজ্ঞান অপেক্ষা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ।

কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস কী 

 কুসংস্কার হল মানুষের যুক্তি-বিচারহীন অন্ধবিশ্বাস, মিথ্যা ধারণা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় superstition । আজকের যুগে বাস করেও মানুষের তন্ত্রমন্ত্র, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, মাদুলি, ভুত-প্রেত, ডাইনি, জিন ইত্যাদিতে অগাধ বিশ্বাস । এখনও গ্রামেগঞ্জে অনেক নারী-পুরুষকে ডাইন অপরাধে পুড়ে মরতে হচ্ছে । অনেক শিক্ষিত মানুষের মনে টিকটিকির পতন, কালো বেড়ালের রাস্তা পার হওয়া, এক শালিক দেখা মানে খারাপ কিছু ঘটবে এরূপ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে । বহু মানুষ রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঝাড়ফুঁক, মাদুলি ধারণ করে । ব্যবসায় উন্নতির জন্য বা সহজে ভাগ্য ফেরানোর জন্য জ্যোতিষীদের কাছে গিয়ে রত্ন ধারণ করে । এইসব অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কার একমাত্র দূর করতে পারে প্রকৃত শিক্ষা ।

কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা  

ধর্মান্ধতার সহায়ক শক্তি হল কুসংস্কার । বিজ্ঞানী কোপারনিকাস ও গ্যালিলিও প্রমাণ করে ছিলেন যে, পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে কিন্তু খ্রিষ্টধর্মের শাস্ত্রের সঙ্গে এই সত্যের মিল ছিল না বলে খ্রিস্টান যাজকেরা এই দুই বিজ্ঞানীর উপর অকথ্য নির্যাতন চালান । ঊনবিংশ শতাব্দীতে যে সকল ভারতীয় সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইংল্যান্ড, আমেরিকায় যেতেন তাদের ধর্মচ্যুত ও জাতিচ্যুত হতে হয়েছে । এখনও অনেক জায়গায় এই ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার সমানভাবে রয়েছে ।

পথের দিশা

 বিজ্ঞান ও কুসংস্কার দুটোই মানব মনের ফসল । যুক্তিবাদী প্রকৃত সত্যান্বেষী সংস্কারমুক্ত মানুষ সঠিক পথের দিশা দিতে পারে । ছাত্র সমাজেরও এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা আছে । চির নতুনের পূজারী ছাত্রছাত্রীরা বৈজ্ঞানিক সত্যের মধ্য দিয়ে সমাজের সর্বস্তরে প্রচারে নেমে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস থেকে মানুষকে সত্যের আলোয় আনতে পারে । বিভিন্ন সেমিনার করে, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ছোটখাটো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কোনটি সত্য আর কোনটি সত্য নয় তা বোঝাতে হবে । তাহলে কাজটি সহজ হবে । কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস মানুষকে নিম্নগামী করে, কখনো ঊর্ধ্বগামী করে না —সেটা আমাদের বুঝতে হবে তাহলেই পৃথিবীর মঙ্গল হবে ।

উপসংহার

কুসংস্কারের একমাত্র শত্রু হল বৈজ্ঞানিক মনোভাব ও বিজ্ঞানচেতনা। বিজ্ঞানচেতনার সঙ্গে শিক্ষার ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। তাই সমাজ থেকে কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস দূর করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে শিক্ষক ও ছাত্রসমাজকে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় "ওঝাকেই আগেভাগে" ভূতে যেন না পায়। দেশের শিক্ষিত মানুষকে এই কথা বুঝতে হবে। দায়িত্ব তাঁদের‌ই, তাঁরাই পারেন কুসংস্কারের ভূত ছাড়াতে।

ছাত্রজীবনে খেলাধূলার গুরুত্ব


এই রচনাটি ২০২০ সালের মাধ্যমিকে পড়েছে।

ভূমিকা:

 ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজ হল পড়াশুনা করা । পড়াশুনাকে তপস্যার মতো করেই করা দরকার । তবে পড়াশুনার সাথে সাথে শরীরচর্চা ও খেলাধূলার বিশেষ প্রয়োজন আছে । কারণ অসমর্থ ও দুর্বল শরীরে কখনো ভালো পড়াশুনা হয় না । এই প্রসঙ্গে তরুণদের উদ্দেশ্যে স্বামীজী বলেছেন "গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের আরও নিকটবর্তী হইবে ।" ফুটবল খেলা অর্থাৎ নিয়মিত খেলাধূলা মন ও শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখে একথা সবাই স্বীকার করে ।

খেলাধূলা ও শরীরচর্চা  

 খেলাধূলা আমাদের মনকে সতেজ করে শরীরকে সুস্থ রাখে । ছাত্রজীবনে অনাবিল আনন্দ দিতে পারে একমাত্র খেলাধূলা । খেলাধূলার জন্য চাই সবুজ মাঠ । আর এই সবুজ মাঠের অভাব বর্তমানে খুবই প্রকঠ । অভাব থাকা সত্ত্বেও স্কুলে বা যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন যোগাসনের মধ্য দিয়ে শরীরচর্চা করানো একান্ত প্রয়োজন । সুস্থ শরীরের অধিকারীরাই পারে সুন্দর কিছু করতে ও লেখাপড়ায় আরও আগ্রহী হতে । 

খেলাধূলার প্রকারভেদ 

 খেলাধূলা মূলত দুই প্রকারের । একটা হল ইনডোর গেম আর একটা হল আউটডোর গেম । ঘরে বসে যে খেলা গুলো করা হয় যেমন, লুডো, দাবা, তাস ইত্যাদিকে বলা হয় ইনডোর গেম । আর যেগুলো বাড়ির বাহিরে মাঠে খেলা হয় যেমন- ফুটবল, ভলিবল, কবাডি, ক্রিকেট ইত্যাদিকে বলা হয় আউটডোর গেম ।

খেলাধূলা ও চরিত্র বিকাশ 

 খেলাধূলা শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে অনাবিল আনন্দ দেয় তা নয়, চরিত্রের বিকাশও ঘটায় । খেলাধূলা থেকে নিয়ম-শৃঙ্খলার বোধ জাগে যা চরিত্র গঠনে বিশেষ প্রয়োজনীয় । দলকে নেতৃত্ব দেওয়া, দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার মানসিকতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বোধ খেলাধূলা থেকেই জন্ম নেয় । এই সব মানবিক মূল্যবোধ একজন প্রকৃত নাগরিকের একান্ত প্রয়োজন । এছাড়া খেলাধূলায় হার ও জিত অবশ্যম্ভাবী, কখনও একপক্ষ জয়লাভ করে আর অন্যপক্ষ হারে । এই সাফল্য ও ব্যর্থতার ধারণা সহজে গ্রহণ করার শিক্ষা পাওয়া যায় খেলাধুলা থেকে । এই শিক্ষা পরবর্তী জীবনে সহজে সাফল্য বা ব্যর্থতাকে গ্রহণ করতে পারে সবাই ।
আধুনিক জীবন ও খেলাধূলা :- আধুনিক জীবনে যৌথ পরিবার বা একান্নবর্তী পরিবার ভেঙ্গে গিয়ে ছোট ছোট নিউক্লিয় পরিবারে পরিণত হচ্ছে । এর ফলে বাচ্চারা বড় বেশি একাকিত্বে ভুগছে । এরপর আছে লেখাপড়ার চাপ, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার চাপ । এইসব টানাপোড়েনে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত । প্রবল চাপে অনেক বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে । এই সব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে খেলাধূলা । খেলাধূলাই পারে মনের সব ক্লান্তি দূর করে দিতে । তাই আমাদের বড়দের এদিকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে যাতে আমাদের নতুন প্রজন্ম উন্মুক্ত প্রান্তরে একটু নিশ্বাস নিতে পারে এবং মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে পারে ।

খেলাধূলা ও জাতীয়তা-আন্তর্জাতিকতা 

 বর্তমানে খেলাধূলা শুধু চিত্ত বিনোদন বা শরীর গঠন করে না, আরও বৃহত্তর জগতে পরিচিত হতে সাহায্য করে । খেলাধূলার মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠে । এক রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা হয় । সেখান থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের জাতীয়তা বোধের জন্ম নেয় । ক্রিকেট, দাবা, ব্যাডমিন্টন প্রভৃতি খেলাধূলা আজ শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, পৃথিবীর বহু দেশের সঙ্গে ভারতীয়রা ক্রিকেট খেলছে । ব্যাডমিন্টন খেলে ভারতকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করছে । এইভাবে আন্তর্জাতিকতা বোধও জাগ্রত হচ্ছে ।

উপসংহার 

সুস্থ শরীরের জন্য নিয়মিত খেলাধূলা ও শরীরচর্চা প্রয়োজন এ কথা আমরা সবাই স্বীকার করি । খেলাধূলার মাধ্যমে শরীর সুগঠিত হয় এবং নৈতিকতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি ও ভাতৃত্ববোধের জন্ম হয় । এইসব গুণের বিকাশের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় একজন প্রকৃত মানুষ । আধুনিক সমাজে তাই খেলাধূলার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে । বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধূলার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে সরকারকেও এ বিষয়ে আরো বেশি নজর দিতে হবে ।

আমার প্রিয় বাংলা ভাষা / আ মরি বাংলা ভাষা

ভূমিকা

বাঙালি জাতির কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও সবচেয়ে গর্বের সম্পদ হল তার মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষার সঙ্গে বাঙালির সংস্কৃতি ও জীবনযাপন জড়িয়ে আছে নিবিড়ভাবে। এই ভাষাকে নিয়ে বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসা প্রমাণিত হয়েছে রক্তের অক্ষরে। মাতৃভাষাকে রক্ষা করার লড়াইয়ে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে বাঙালি। গোটা পৃথিবী সেই আত্মদানের দিনটিকে স্মরণ করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে। সেই দিনটি, অর্থাৎ ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে ভাষা-শহীদ দিবস নামেও পরিচিত।

জন্ম ইতিহাস

ভাষাতাত্ত্বিক‌দের মতে বাংলা ভাষার জন্ম হয় আনুমানিক নবম-দশম শতাব্দীতে। পূর্বী মাগধী অপভ্রংশ ও স্থানীয় অস্ট্রিক ভাষার সংমিশ্রণে বাংলা ভাষার জন্ম হয়। চর্যাপদ থেকে শুরু করে অসংখ্য সাহিত্য-সাধনার পথ ধরে এগিয়ে চলতে থাকে বাংলা ভাষা। রচিত হয় কৃত্তিবাসের রামায়ণ, কাশীরামের মহাভারত, মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল, চণ্ডীদাস-গোবিন্দদাসের পদাবলী, ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল প্রভৃতি বিখ্যাত গ্রন্থ। এর পর আধুনিক যুগে মহাকবি মাইকেল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, নজরুল ইসলাম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ অসংখ্য কবি-সাহিত্যিকের সাহিত্য সাধনায় দিনে দিনে সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করেছে বাংলা ভাষা। আজ এই ভাষা পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম ভাষা।

বাংলা ভাষার সম্পদ

বিগত প্রায় এক হাজার বছর ধরে বাঙালি কবি-লেখকদের সাধনার ফলে সঞ্চিত হয়েছে এক বিশাল সাহিত্য-ভাণ্ডার। রামায়ণ, মহাভারত, বৈষ্ণব পদাবলী, শাক্ত পদাবলী, মঙ্গলকাব্য প্রভৃতি মধ্যযুগীয় রচনার ঐতিহ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের বিশাল ইমারত। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অসংখ্য রচনার মধ্য দিয়ে জয় করেছেন বিশ্ববাসীর হৃদয়। রবীন্দ্রনাথের গানগুলি সমাদৃত হয়েছে গোটা পৃথীবিতে। বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, মানিকের উপন্যাস অনূদিত হয়েছে বহু ভাষায়। এইসব মহান সাহিত্যিকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজ‌ও অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলার সাহিত্য সাধনা। দুই বাংলার অসংখ্য কবি-লেখকের রচনায় দিনে দিনে সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের মাতৃভাষা।

বাংলা ভাষার সৌন্দর্য

বাংলা হল পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটি ভাষা। এই ভাষার সুললিত শব্দ, বাক্য গঠনের অপরূপ কৌশল, ধ্বন্যাত্মক শব্দের শ্রুতিমাধুর্য, সর্বোপরি বাংলা ভাষার কাব্যিকতা এই ভাষাকে করে তুলেছে মধুর। বাংলার বাউল ভাটিয়ালি, জারি সারি, ভাদু টুসু ঝুমুর প্রভৃতি লোকগানের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায় এ ভাষার অপরূপ সৌন্দর্য। বাংলার সবুজ প্রকৃতির সাথে বাংলা ভাষাও যেন এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। এই ভাষাকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতি গড়ে তুলেছে এক সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। 

উপসংহার

বর্তমান যুগে পৃথিবীর সর্বত্রই ছোটো ভাষাগুলিকে গ্রাস করে নিচ্ছে বড় ভাষা। আমাদের বাংলাও তার হাত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। ইংরেজি ও হিন্দির আগ্রাসনে আজ বাংলা ভাষা বিপদের মুখে। ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করার প্রবণতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি কাজে অবহেলিত হচ্ছে আমাদের মাতৃভাষা। একদিন প্রাণের বিনিময়ে যে ভাষাকে রক্ষা করেছিলেন বাংলার বীর যোদ্ধারা, আমাদের সেই প্রিয় ভাষাকে আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। উৎসাহিত করতে হবে ভাষা ও সাহিত্যের চর্চাকে।


পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

এই রচনাটি মাধ্যমিক ২০২০তে পড়েছে।

ভূমিকা

 আকাশ, বাতাস, জল, উদ্ভিদজগত, প্রাণীজগত সবকিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ । এগুলির কোনোটিকে বাদ দিয়ে আমরা বাঁচতে পারি না । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশের উপাদানগুলি বিনষ্ট হচ্ছে নানা ভাবে। ফলে মানব সভ্যতার সামনে এগিয়ে আসছে সংকট।

বায়ুদূষণ ও মানবজীবনে তার প্রভাব

 আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম ও প্রধান হলো বায়ু বা বাতাস যা ছাড়া প্রাণীজগত এক মুহূর্ত ও বাঁচতে পারে না । বায়ুদুষণের অন্যতম কারণ হল নিউক্লীয় আবর্জনা, কয়লা পুড়িয়ে কার্বন-ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া, কলকারখানার দূষিত গ্যাস, যানবাহনের জ্বালানি পোড়া গন্ধ বাতাসে মিশে বাতাস দূষিত হচ্ছে । দুষণের ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার হতে হচ্ছে ।

জলদূষণ ও তার প্রতিক্রিয়া

 জলের আর এক নাম জীবন । জল ছাড়া কোনো জীব বাঁচে না । অথচ সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে কলকারখানার সংখ্যা বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত । সেই কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত জল নদীর জলে মিশে নদীর জলকে দূষিত করছে । এছাড়া শহরের সমস্ত নর্দমার জল ও নদীতে পড়ে নদীর জলকে দূষিত করছে । ফলে জলবাহিত রোগের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । জলবাহিত রোগে আজ মানুষ বড় বিপন্ন ।

শব্দদূষণ

 কলকারখানার উচ্চশব্দ, যন্ত্রচালিত গাড়ির হর্ন, বাজি-পটকার শব্দ মাইক্রোফোনের আওয়াজে মানুষের শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে । মানসিক বিপর্যয়, রক্তচাপ বৃদ্ধি, স্নায়বিক অস্থিরতা প্রভৃতি নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি করছে ।

মাটিদূষণ 

 বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে সবুজবিপ্লব এসেছে । কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গিয়ে জমিতে নানা প্রকারের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, এর ফলে মাটি দূষিত হচ্ছে । সারা বছর জমিতে সেচব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য বহু নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে একদিকে যেমন নদীর জল দূষিত হচ্ছে অপরদিকে মৃত্তিকা দূষণ ও হচ্ছে । রাসায়নিক সার দ্বারা প্রস্তুত কৃষিজাত সামগ্রী থেকে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি হচ্ছে ।

 প্রতিকার  

পরিবেশ দূষণ আজ সারা পৃথিবীর একটি বিরাট সমস্যা । এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে । সব রকম দূষণ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে একমাত্র উদ্ভিদ । সবুজ উদ্ভিদ বা গাছ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে । এই প্রক্রিয়ায় গাছ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আর বাতাসে অক্সিজেন ছেড়ে দেয় । যে অক্সিজেন প্রাণীজগতের বাঁচার জন্য অপরিহার্য । তাই বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে । তাহলে বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য বজায় থাকবে । কলকারখানা থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবস্থা গ্রহণ, যথা কলকারখানার বা নর্দমার তরল যাতে নদীর জলে না মেশে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । শব্দদূষণ কমানোর জন্য শব্দ নিরোধক যন্ত্রের ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে । রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের প্রয়োগ বেশি করে এবং কীটনাশকের পরিমাণ কমিয়ে মৃত্তিকা দূষণ রোধ সম্ভব । সর্বোপরি যানবাহনে পেট্রল বা ডিজেল পোড়ানোর পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবহার করতে পারলে দূষণ থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যাবে ।

উপসংহার 

 পরিবেশ দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা । এর কারণে আজ মানব সভ্যতার অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে । এই গভীর সংকটের মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রত্যেকেই সচেতন হতে হবে এবং নজর দিতে হবে যাতে পরিবেশের দুষণের মাত্রা না বাড়ে । কারণ বিজ্ঞান যতই উন্নত হোক বা প্রযুক্তিবিজ্ঞান যতই আমাদের উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যাক না কেন মানুষের জন্য সভ্যতা মানুষের হাতেই যদি বিনাষ্ট হয় তাহলে কী লাভ ?- নগর পুড়লে দেবালয় কি এড়ায় ? এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদের সবাইকেই হাত মিলিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হবে ।  


 আর‌ও পড়ো

Comments

Popular Posts