অদল বদল গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর

 দশম শ্রেণির অদল বদল গল্পের প্রশ্নোত্তর 



গুজরাটি সাহিত্যিক পান্নালাল প্যাটেলের লেখা 'অদল বদল' গল্পটি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য হিসেবে নির্বাচন করেছে। গল্পটির অনুবাদ করেছেন অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্ত।

প্রশ্ন: 'অদল বদল' গল্পে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে বার্তা প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

 উত্তর:  বহু ভাষা, বহু ধর্ম ও বহু সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র ভারতবর্ষ। এ দেশের বৈচিত্র্যময় মানবতাই এ দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কিন্তু বিচিত্র জাতিধর্ম একদিকে সৃষ্টি করে বিভেদের সম্ভাবনা। সংকীর্ণ স্বার্থপরতার হীন ষড়যন্ত্র অনেক সময়ই মানুষে মানুষে জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ এমনকি হিংসার‌ও জন্ম দেয়। তাই আমাদের মতো দেশে ছাত্রজীবন থেকেই জাতীয় স্বার্থে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় ও জাতিগত ঐক্যের চেতনা বিস্তার করা একান্ত জরুরি। এই কাজটি সবচেয়ে ভালো ভাবে করার একটি শ্রেষ্ঠ উপায় হলো ধর্মীয় ঐক্যমূলক সাহিত্যের প্রসার। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সংকলিত দশম শ্রেণির 'পাঠ সঞ্চয়ন' গ্রন্থে এমন‌ই একটি গল্প অনুবাদের মাধ্যমে সংকলিত করা হয়েছে। গল্পটির নাম 'অদল বদল'। মূল গল্পটির লেখক পান্নালাল প্যাটেল, গল্পটি গুজরাটী ভাষায় লেখা। এই গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন লেখক অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্ত। 'অদল বদল' গল্পের অমৃত ও ইসাব দুই ভিন্ন ধর্মের কিশোর। তাদের অমলিন বন্ধুত্বের কাহিনী আমাদের অনুপ্রাণিত করে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে মানবতার মন্ত্রে দীক্ষিত হতে। বর্তমান প্রতিবেদনে আমরা এই বিষয়টির উপরেই আলোকপাত করবো।

 পরিশেষে কয়েকটি কথা না বললেই নয়: বর্তমান ভারতের সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ধরনের গল্প শুধুমাত্র ছাত্রজীবনে নয়, সু প্রভাব বিস্তার করতে পারে বৃহত্তর সামাজিক জীবনেও। মৌলবাদী মানসিকতার যে করাল ছায়া আমাদের সামাজিক স্থিতিকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে তাকে পরাস্ত করতে হবে সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা দিয়েই। চিরসুন্দরের কাছে অসুন্দরের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। ভারতের ঘরে ঘরে অবশ্যই জন্ম নেবে লক্ষ লক্ষ অমৃত আর লক্ষ লক্ষ ইসাব‌। তাদের হাত ধরে গড়ে উঠবে এক উন্নততর ভারতবর্ষ। যে ভারতবর্ষের প্রান্তে দাঁড়িয়ে কবি আবার‌ও একবার উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করতে পারবেন তাঁর সেই চিরন্তন বাণী 

"হে মোর চিত্ত পুণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে"


প্রশ্ন: অদল বদল গল্পে অমৃত চরিত্রের পরিচয় দাও 

 উত্তর:  গুজরাটি কথা সাহিত্যিক পান্নালাল প্যাটেলের লেখা'অদল বদল' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অমৃত নামের এক কিশোর। অমৃত চরিত্রটিকে লেখক এই গল্পে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। গল্পে অমৃত চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি ফুটে উঠেছে তা নিচে আলোচনা করা হলো।

জেদ

অদল বদল গল্পে আমরা দেখতে পাই অমৃত খুব জেদি প্রকৃতির ছেলে। বন্ধু ইসাবের মতো হুবহু একই রকম জামা কেনার জেদ থেকে সে কিছুতেই সরে আসে না। নতুন জামা কেনার জন্য সে মার খেতেও রাজি। শেষ পর্যন্ত তার জেদের কারণেকে তাকে নতুন জামা কিনে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তার বাবা।

শান্তিপ্রিয়তা

অমৃত জেদি হলেও শান্তিপ্রিয় স্বভাবের ছেলে। হোলির দিনে ইসাবের সঙ্গে বেড়াতে বেরোলে কালিয়া নামের ছেলেটি তার সঙ্গে কুস্তি করতে চাইলে অমৃত তাকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল। নতুন জামা ছিঁড়ে গিয়ে ঝামেলায় জড়াতে চায়নি।

বন্ধুপ্রীতি

'অদল বদল' গল্পে বন্ধু ইসাবের প্রতি অমৃতের অকৃত্রিম ভালোবাসা পাঠককে মুগ্ধ করে। এই গুণটিই অমৃত চরিত্রের সবচেয়ে বড়ো পরিচয় বলা চলে। কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়তে গিয়ে ইসাবের জামা ছিঁড়ে গেলে অমৃত নিজের জামা খুলে বন্ধুকে পরতে দিয়েছে। কারণ সে জানতো ইসাবের ছেঁড়া জামা দেখলে তার বাবা তাকে মারবেন এবং সেই মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ইসাবের মা নেই।

উপস্থিত বুদ্ধি

অমৃত চরিত্রের আর একটি অন্যতম গুণ হল তার বিচক্ষণতা ও উপস্থিত বুদ্ধি। ইসাবের জামা ছিঁড়ে গেলে অমৃত খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তার কী করা উচিত। সে দেখে তার ও ইসাবের জামা হুবহু এক‌ই রকম। তাই নিজেদের মধ্যে জামা অদল বদল করে নিলে ইসাবের বাবা কিছু টের পাবেন না।

অনুভূতি-প্রবণতা

অমৃত চরিত্রের অনুভূতি-প্রবণতা আমাদের নজর কাড়ে। বন্ধু ইসাব যে মাতৃহীন এবং তার বাবা তাকে মারলে তাকে বাঁচানোর কেউ নেই, এই সত্য কথাটি অমৃত খুব সহজেই অনুভব করে ফেলে। অমৃতের এই সহানুভূতিশীল মানসিকতা ইসাবের বাবার‌ও চোখ খুলে দিয়েছিলো। গ্রাম প্রধান‌ও অমৃতের এই আচরণকে সম্মান জানিয়ে তাদের দুই বন্ধুর নাম দিয়ে দেন অদল ও বদল।

প্রশ্ন: "অমৃতের জবাব আমাকে বদলে দিয়েছে" বক্তা কে? অমৃতের জবাব বক্তাকে কী ভাবে বদলে দিয়েছিল?


উত্তর:  উদ্ধৃত অংশটি পান্নালাল প্যাটেলের লেখা 'অদল বদল' গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতাংশটির বক্তা ইসাবের বাবা হাসান। তিনি অমৃতের মায়ের উদ্দেশ্যে কথাটি বলেছেন।

হোলির দিনে এক‌ই রকম জামা গায়ে অমৃত আর ইসাব বেড়াতে বের হ‌ওয়ার পর কালিয়া নামের একটি ছেলে গায়ে পড়ে অমৃতের সঙ্গে কুস্তি করতে চেয়ে অমৃতকে ফেলে দেয়। ইসাব এই ঘটনায় রেগে গিয়ে কালিয়াকে পাল্টা আছাড় দেয়। কিন্তু এইসবের মধ্যে ইসাবের নতুন জামার খানিকটা ছিঁড়ে যায়। অমৃত বুঝতে পারে এরপর ইসাবকে তার বাবা পেটাবেন। বন্ধুকে মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সে নিজের জামা ইসাবকে দিয়ে ইসাবের ছেঁড়া জামা নিছে নিতে চায়। ইসাব তখন জানতে চায় অমৃতকেও তো মার খেতে হবে। অমৃত তখন ইসাবকে বলে, তাকে বাঁচানোর জন্য তার মা আছে, ইসাবকে বাঁচানোর কেউ নেই। 

অমৃত ও ইসাবের এই কথোপকথন আড়াল থেকে শুনছিলেন ইসাবের বাবা। তিনি অমৃতের কথা শুনে বুঝতে পারলেন মায়ের স্নেহ কী জিনিস। এতদিন তিনি মাতৃহীন ইসাবের মায়ের অভাব পূরণ করতে চেষ্টা করেননি। অমৃতের কথা শুনেই তাঁর চোখ খুলে যায় ও নিজেকে বদলে ফেলেন।

বাংলা ব্যাকরণ শিখতে আমাকে YouTube-এ সাবস্ক্রাইব করার জন্য এখানে ক্লিক করো।

আর‌ও পড়ো

Comments

  1. স্যার আফ্রিকা, সিন্ধুতীরে, পথের দাবী.... বিস্তারিত আলোচনা করবেন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular Posts