সবুজ জামা কবিতার ভাববস্তু আলোচনা করো

 সবুজ জামা : বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

 সবুজ জামা কবিতার ভাববস্তু বা সারাংশ

 বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'সবুজ জামা' কবিতাটি একটি রূপক-ধর্মী কবিতা। এই কবিতায় কবি বোঝাতে চেয়েছেন: শিশুমনের উপযুক্ত বিকাশের জন্য প্রকৃতির সঙ্গে শিশুদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। আধুনিক পৃথিবীর প্রতিযোগিতার বাজারে শিশুরা প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পায় না। পাঠ্য পুস্তকে মুখ গুঁজে পড়াশোনা করতে করতেই তাদের শৈশব, কৈশোরের অনাবিল আনন্দ মাটি হয়ে যায়। তাদের চরিত্রের উপযুক্ত বিকাশ ঘটে না। অথচ শিশুদের মন সব সময়ই চায় প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে। কিন্তু আধুনিক যুগের অভিভাবকদের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় স্কুলের পড়াশোনা, পরীক্ষায় ভালো ফল এবং পরিশেষে ভালো চাকরি। সন্তানের সাফল্যের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় শিশুদের বেড়ে ওঠার আনন্দ এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর 'সবুজ জামা' কবিতায় এই বিষয়টিকেই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। 

সবুজ জামা কবিতার ব্যাখ্যা

সবুজ জামা কবিতার আলোচনা, ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ


"গাছেরা কেমন সবুজ জামা পরে থাকে 

আমাদের তোতাইবাবুরও একটি সবুজ জামা চাই।"

ব্যাখ্যা: গাছেরা সবুজ জামা পরে প্রকৃতির মধ্যে বিরাজ করে ও পৃথিবীকে শ্যামলতায় ভরিয়ে রাখে। আমাদের তোতাই বাবু এখানে কোনো নির্দিষ্ট শিশু নয়। আমাদের ঘরে ঘরেই রয়েছে তোতাইয়ের মতো লক্ষ লক্ষ শিশু। তারা সবুজ জামা চায়, অর্থাৎ সবুজ প্রকৃতির আচ্ছাদনে আবৃত হয়ে থাকতে চায়। সবুজ জামা আসলে সবুজ প্রকৃতির প্রতীক।

"চাই তো, কিন্তু তুই এখন অ-আ-ক-খ শিখবি,

ইস্কুলে যাবি।"

ব্যাখ্যা: তোতাইবাবুর সবুজ জামা চাই, কিন্তু তোতাইয়ের অভিভাবকদের কাছে তার প্রাণের চাহিদার কোনো মূল্য নেই। তাদের কাছে বড়ো কথা হলো তোতাইয়ের পড়াশোনা, সাফল্য। তাই তোতাইয়ের প্রাণের চাহিদা পূরণ হয় না। তাকে বাধ্য হয়ে বাঁধা পড়তে হয় স্কুলের চার দেওয়ালের ভিতর। তাকে বিসর্জন দিতে হয় মনের আকাঙ্ক্ষা।

"গাছেরা এক-পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে 

তাদের জামা তুই গায়ে দিতে চাস কেন?"



ব্যাখ্যা: এরপর তোতাইয়ের মগজ ধোলাই করা হয়। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় গাছেরা এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে। গাছেদের মতো হ‌ওয়ার মধ্যে কোনো সাফল্য নেই, কোনো প্রাপ্তি নেই।

"তোতাই অ-আ-ক-খ পড়বে না

ইস্কুলে যাবে না;"

ব্যাখ্যা: কিন্তু তোতাইয়ের মন কোনো কথাই শুনতে চায় না। সে পড়তে চায় না, খেলতে চায়। সে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বড়ো হয়ে উঠতে চায় স্বাভাবিক ভাবে। 

"আর, এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তো খেলা---

দাদু যেন কেমন, চশমা ছাড়া চোখে দেখে না।"

ব্যাখ্যা: তোতাই বুঝতে পারে, তাকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। সে বুঝতে পারে, তার দাদুর চোখে আছে স্বার্থের চশমা। চশমা আসলে স্বার্থবুদ্ধির প্রতীক। অভিভাবকরা সমস্ত ব্যাপারকেই ওই স্বার্থবুদ্ধির চশমার ভিতর দিয়ে দেখতে চান। 

"তোতাইয়ের একটি সবুজ জামা চাই

তবেই না তার ডালে প্রজাপতি বসবে

আর টুপ করে তার কোলের ওপর নেমে আসবে 

একটা, দুটো, তিনটে লাল-নীল ফুল 

তার নিজের..."

ব্যাখ্যা: তোতাইদের প্রকৃতির মধ্যে বড়ো হ‌ওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই তারা হয়ে উঠবে প্রকৃত মানুষ। তারা খুঁজে পাবে সৌন্দর্যে ভরা এক অপরূপ জগৎ। সে জগতে প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় পাখনা মেলে। শিশুদের মন বিকশিত হয় বৃক্ষের মতো। তারা হয়ে ওঠে সৃজনশীল। গাছ যেমন নিজের ফুল ফুটিয় জগৎকে সৌন্দর্য আর সুগন্ধে ভরিয়ে তোলে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে বড়ো হ‌ওয়ার সুযোগ পেলে আমাদের তোতাইরাও হয়ে উঠবে সৃষ্টিশীল। নতুন নতুন সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তারা এই পৃথিবীকে আর‌ও সুন্দর করে গড়ে তুলবে।


সবুজ জামা কবিতার প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: সবুজ জামা কিসের প্রতীক?
উত্তর: সবুজ জামা সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্যের প্রতীক।

প্রশ্ন: "চশমা ছাড়া চোখে দেখে না।" তাৎপর্য কী?
উত্তর: চশমা শব্দটি এখানে স্বার্থের ঠুলি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অভিভাবকরা সবসময় নিজেদের স্বার্থবুদ্ধি দিয়েই সবকিছু বিবেচনা করেন। তাই তোতাইকে তাঁরা প্রকৃতির কাছে নয়, ইস্কুলে পাঠাতে চান।


আর‌ও পড়ো অনুচ্ছেদ রচনা





Comments

Popular Posts