অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার আলোচনা

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার মূল বক্তব্য



জয় গোস্বামীর লেখা অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতাটি হিংসায় উন্মত্ত বর্তমান পৃথিবীর সহিংসতার বিরুদ্ধে এক সুমধুর প্রতিবাদ। পৃথিবী জুড়ে যখন চলছে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, লোভ-লালসায় অন্ধ মানুষ যখন সভ্যতার মেরুদণ্ডে ঘুণ ধরিয়ে দিতে ব্যস্ত, শান্তির ললিত বাণী যখন ব্যর্থ পরিহাস বলে মনে হয়, তখন সেই প্রতিকূলতার মধ্যেও কবি জয় গোস্বামী উচ্চারণ করেছেন চিরন্তন সৌন্দর্যের বাণী। হিংসামত্ত মানব সভ্যতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, "অস্ত্র ফেলো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে।"

অহিংসার পূজারী কবি এই কবিতায় হিংসার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন চিরন্তন সৌন্দর্যের প্রতীক গানকে। কবি জানেন, এ লড়াই এক অসম লড়াই। তবুও 'হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়ানোর' সংকল্পে কবি অবিচল। নিজের সীমিত শক্তিকে অতিক্রম করে গিয়ে জীবনের গান গাইতে এগিয়ে আসেন কবি। তাঁর সৃজনীশক্তির কোকিলটি মাথার উপর উড্ডীন স্বার্থপর চিল-শকুনদের উপেক্ষা করে একাই গেয়ে যায় জীবনের গান। কারণ কবি জানেন, এই গান‌ই পারে মানুষকে মানবতার পাঠ দিতে। গান‌ই পারে নদী আর পল্লী প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিতে। কবির ভাষায় এই গান‌ই হয়ে উঠবে ঋষিবালক। সে এসে তপোবনের স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেবে উন্মত্ত পৃথিবীর বুকে। (শব্দ-সংখ্যা ১৫০-১৬০)

'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতায় কবির যুদ্ধবিরোধী মানসিকতার পরিচয় দাও।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জয় গোস্বামীর লেখা অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে আধুনিক বিশ্বের উন্মত্ত হিংসার বিরুদ্ধে এক অভিনব প্রতিবাদ।

ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে গোটা পৃথিবীর রাষ্ট্রশক্তিগুলি আজ ছুটে চলেছে এক অদ্ভুত অবক্ষয়ের দিকে। অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, হিংসার বেসাতি আর যুদ্ধের হুংকার বিপন্ন করছে শান্তিকামী সাধারণ মানুষের জীবনকে। এইসব সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়েই কবির কণ্ঠ থেকে উঠে এসেছে এক পরম আহ্বান: "অস্ত্র ফেলো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে।" গান হল সংবেদনশীলতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। একজন স্রষ্টা হিসেবে নিজের সুললিত ছন্দোবদ্ধ কবিতার মধ্যে দিয়ে মানব হৃদয়কে সুবাসিত করাই কবির কাজ। এই দিক দিয়ে একজন গায়কের সঙ্গে কবির কোনো পার্থক্য নেই; পার্থক্য নেই গানের সঙ্গে কবিতার। অহিংসায় বিশ্বাসী কবি তাঁর গানের ডালি নিয়ে হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছেন। নিজের সুললিত সৃষ্টির দ্বারা তিনি মুছে দিতে চান হিংসার ক্ষত। লড়াই অসম জেনেও কবি এগিয়ে আসেন। বুলেটের বিরুদ্ধে বুলেট নয়, হিংসার বিরুদ্ধে হিংসা নয়, তিনি লড়ছেন নিজের কবিতার অস্ত্রে। মানব সমাজকে তিনি অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষা দিতে ব্রতী হয়েছেন। এই কবিতার ছত্রে ছত্রে রয়েছে হিংসা ত্যাগ করে সৌন্দর্যের প্রতিরূপ সঙ্গীতের কাছে আশ্রয় নেওয়ার বার্তা। তাই মোটের উপর সমগ্র কবিতাটিকেই একটি সার্থক যুদ্ধবিরোধী বা হিংসাবিরোধী কবিতা বলা যায়। 

অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতা থেকে ৩ নাম্বারের প্রশ্ন

১:"গান তো জানি একটা দুটো"-- তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।


উদ্ধৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামীর লেখা 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

পৃথিবী জোড়া উন্মত্ত হিংসা ও অস্ত্র-প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কবির একমাত্র হাতিয়ার হলো তাঁর গান বা সৃষ্টি। নিজের সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই তিনি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান শুভ চেতনা। কিন্তু কবির সৃজনীশক্তি সীমিত। সেই সীমিত শক্তিকে আশ্রয় করেই তাঁর লড়াই তিনি চালিয়ে যাবেন।

২: "রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে"-- তাৎপর্য লেখ।


উদ্ধৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামীর লেখা 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

কবির লড়াই হিংসার বিরুদ্ধে। নিজের সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তিনি মানবসমাজের হিংসা মুছে ফেলতে চেষ্টা করেন। গান‌ই তাঁর একমাত্র হাতিয়ার। হিংসার ফলে সমাজে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তাকে তিনি নিজের সৃষ্টির দ্বারা মুছে ফেলতে চেষ্টা করেন। এই অংশে কবির মানবতাবাদী ও যুদ্ধবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে।

৩: "মাথায় কতো শকুন বা চিল"-- শকুন চিল কারা? তাদের বিপরীতে কী আছে?


উদ্ধৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামীর লেখা 'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

এখানে শকুন বা চিল বলতে কবি সমাজের উপরতলায় বিচরণকারী স্বার্থপর মানুষের কথা বলেছেন। এরাই যুদ্ধ শুরু করে আর যুদ্ধের ফলে এরাই লাভবান হয়।

এইসব চিল-শকুনদের বিপরীতে আছে কবির একক কোকিল, কবির সৃজনশীলতা। এই একক কোকিলের সহস্র ডাকের মধ্যে দিয়ে কবি এই পৃথিবীতে নিয়ে আসতে চান শান্তির চিরবসন্ত।

৪: "গান দাঁড়াল ঋষিবালক" -- গানকে ঋষিবালক বলার কারণ কী?


উদ্ধৃত অংশটি কবি জয় গোস্বামীর লেখা'অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

কবি বলেছেন, মানুষ যদি হিংসা ভুলে অস্ত্র ত্যাগ করতে পারে তাহলে গান হয়ে উঠবে ঋষিবালক। এই ঋষিবালক শান্তি, শুভ চেতনা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। তাই তার মাথায় গোঁজা ময়ূর পালক। হিংসা না থাকলে কবির গানকে আর রক্ত মুছতে হবে না। গান তখন ঋষিবালক হয়ে উঠবে। হয়ে উঠবে শান্তি ও সৌন্দর্যের দূত। মানুষকে সে নিয়ে যাবে প্রকৃতির কাছাকাছি।


আর‌ও পড়ুন




Comments

Popular Posts