বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান

'বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান' রচনার প্রশ্নোত্তর


: প্রশ্ন: 'বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান' রচনায় লেখক বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা লেখার ক্ষেত্রে কী কী পরামর্শ দিয়েছেন?

উত্তর: একাধারে রসায়নবিদ ও লেখক রাজশেখর বসু তাঁর 'বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান' প্রবন্ধে বাঙালি বিজ্ঞান-লেখকদের প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলি নিচে আলোচনা করা হলো।

অনুবাদ-বিষয়ক পরামর্শ: রাজশেখর বসু বলেছেন, বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লেখার জন্য লেখকদের যথাযথ অনুবাদের ভাষা সম্পর্কে অবগত হতে হবে। ইংরেজি ভাষার শব্দের যে অর্থব্যাপ্তি রয়েছে, তা বাংলা শব্দের নেই। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটিমাত্র ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দ রূপে ভিন্ন ভিন্ন বাংলা শব্দ ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিভিন্ন বাক্যের অনুবাদ করার সময় বাংলা ভাষার মূলগত প্রকৃতি অক্ষুণ্ন রাখতে হবে।

ভাষা-বিষয়ক পরামর্শ: প্রাবন্ধিক বলেছেন যে, বৈজ্ঞানিক রচনার ভাষা হতে হবে সহজ ও স্পষ্ট। শব্দের অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা, এই তিন প্রকার অর্থের মধ্যে অভিধাকেই ব্যবহার করতে হবে। লক্ষণা, ব্যঞ্জনা এবং উৎপ্রেক্ষা, অতিশয়োক্তি প্রভৃতি অলঙ্কার বর্জন করতে হবে। লেখক উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, "হিমালয় পৃথিবীর মানদণ্ড" এ কথা কাব্যের উপযুক্ত হলেও ভূগোলের উপযুক্ত নয়‌

তথ্য-বিষয়ক পরামর্শ: প্রাবন্ধিক লক্ষ করেছেন, বাংলা সাময়িক পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞানবিষয়ক রচনায় অনেক তথ্যগত ভুল রয়ে যায়। এ বিষয়ে সম্পাদককে সতর্ক থাকতে হবে এবং অবিখ্যাত লেখকের রচনা ছাপানোর আগে অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নিতে হবে।




প্রশ্ন: অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা বলতে কী বোঝায়? বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে কোন প্রসঙ্গে লেখক এই কথাগুলি ব্যবহার করেছেন?

উত্তর: অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা হল শব্দের তিন প্রকার অর্থ। ভাষায় প্রয়োগের ভিত্তিতে এক‌ই শব্দ বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। 


অভিধা: অভিধা হল শব্দের আভিধানিক অর্থ বা সরল অর্থ। অর্থাৎ একটি শব্দের যে অর্থ অভিধানে দেওয়া থাকে, সেটিই ওই শব্দের অভিধা। 

যেমন: চোর শব্দের অভিধা হল তস্কর, আকাশ শব্দের অভিধা গগন। 


লক্ষণা: লক্ষণা বলতে বোঝায় শব্দের এমন অর্থ যা অভিধা অর্থকে সম্পূর্ণ অতিক্রম করে না, অভিধার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো বিশেষ অর্থ বোঝায়। 

যেমন: 'দেশের লজ্জা' বললে দেশবাসীর লজ্জা বোঝায়। 'মনের মানুষ' বললে বোঝায় মনের মতো বা প্রিয় মানুষ।


ব্যঞ্জনা: ব্যঞ্জনা বলতে বোঝায় শব্দের গূঢ় অর্থ। ব্যঞ্জনা সব সময় অভিধাকে পুরোপুরি অতিক্রম করে গিয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে। প্রবাদ-প্রবচন ও রূপকধর্মী রচনায় ব্যঞ্জনা দেখতে পাওয়া যায়। 

যেমন: 'চোরের মায়ের বড় গলা' বললে 'চোরের মা' বলতে অপরাধী বা অপরাধীর সহকারী বোঝায়।

প্রসঙ্গ: বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা লেখার ক্ষেত্রে শব্দ প্রয়োগ প্রসঙ্গে লেখক শব্দের এই তিন প্রকার অর্থের কথা আলোচনা করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, বৈজ্ঞানিক রচনার ভাষা সহজ সরল হতে হবে। এ জন্য শব্দের অভিধা অর্থ‌ই ব্যবহার করা উচিত। লক্ষণা ও ব্যঞ্জনার ব্যবহার না করাই ভালো।

প্রশ্ন: 'বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান' প্রবন্ধে লেখক যে দুই শ্রেণির পাঠকের কথা বলেছেন তাদের পরিচয় দাও।

উত্তর: প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর 'বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান' প্রবন্ধে বাংলায় লেখা বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের দুই শ্রেণির পাঠকের কথা বলেছেন। প্রথম শ্রেণিটি হল যাঁরা ইংরেজি জানেন না ও ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞান পড়েননি‌। অল্পশিক্ষিত বয়স্ক মানুষ ও অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের লেখক এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করেছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক হলেন যাঁরা ইংরেজি ভাষা জানেন ও ইংরেজিতে কম-বেশি বিজ্ঞান পড়েছেন। 

উপরোক্ত দুই শ্রেণির পাঠকের কথা মাথায় রেখেই বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক রচনা লেখা হয়ে থাকে। লেখকের মতে প্রথম শ্রেণির পাঠকরা যেহেতু ইংরেজিতে বিজ্ঞান পড়েননি, তাই তাঁদের পক্ষে বাংলায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ পাঠ করা অপেক্ষাকৃত সহজ। অপর দিকে যাঁরা ইংরেজি জানেন ও ইতিপূর্বে ইংরেজিতে কম-বেশি বিজ্ঞান পড়েছেন, তাঁদের পক্ষে নতুন করে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান পাঠ করা কষ্টকর। বাংলায় বিজ্ঞান পড়ার জন্য তাঁদের পূর্বসংস্কার ও ইংরেজির প্রতি পক্ষপাত বর্জন করে ভালোবাসার সঙ্গে মাতৃভাষার পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হবে। হঠাৎ করে বাংলায় বিজ্ঞান পড়তে গেলে তাঁদের খটকা লাগবে, পরিভাষাগুলিও অপরিচিত লাগবে। পাশ্চাত্য দেশের ছেলেমেয়েরা যেমন প্রথম থেকে সহজ ভাবে মাতৃভাষায় বিজ্ঞান পাঠ করতে পারে, প্রথম শ্রেণির পাঠকরা সেই ভাবেই বাংলায় বিজ্ঞান পড়তে পারবেন। অপরদিকে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠকদের পক্ষে কাজটি ততটা সহজ নয়।


আর‌ও পড়ো


Comments

Popular Posts