দাঁড়াও কবিতার প্রশ্ন উত্তর
দাঁড়াও : শক্তি চট্টোপাধ্যায়়
দাঁড়াও কবিতার ভাববস্তু
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'দাঁড়াও' কবিতাটি আধুনিক যুগের মানুষের একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার বিরুদ্ধে এক আন্তরিক আবেদন। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব হলেও আধুনিক মানুষ বিচ্ছিন্ন। একের সাথে অন্যের সম্পর্কের বাঁধন শিথিল হয়ে গেছে। মানুষ মানুষের বিরুদ্ধে শত্রুতা করছে। এক শ্রেণির মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্য শ্রেণির মানুষকে ফাঁদে ফেলছে, বিপদে ফেলছে। বিপন্ন মানুষকে বাঁচাতে অন্য সব মানুষের এক হওয়া দরকার। পাখিরা যেমন ফাঁদে পড়া সঙ্গীকে ফেলে যায় না, তেমনি মানুষেরও উচিত বিপন্ন মানুষের পাশে থাকা।
"তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে, সন্ধে হলে মনে পড়ছে, রাতের বেলা মনে পড়ছে।" -- তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো
এই অংশে কবি স্মৃতিচারণে মগ্ন হয়েছেন। এখানে সকাল বলতে কবি নিজের জীবন-প্রভাত বা শৈশব-কৈশোরের দিনগুলির কথা বলতে চেয়েছেন। নিজের জীবন প্রভাতে সে সময়ের চেনা মানুষগুলির কথা কবির মনে পড়ছে। একই সঙ্গে মনে পড়ছে বর্তমান অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের কথা। এই অন্ধকারকেই কবি সন্ধ্যা ও রাতের প্রতীকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। এই অংশে সমাজ ও মানুষের যে বদল কবি লক্ষ করেছেন, তার একটি আভাস পাওয়া যায়।
"পাখির মতো পাশে দাঁড়াও।" -- কবি পাখির মতো পাশে দাঁড়াতে বলেছেন কেন?
উঃ উদ্ধৃত অংশটি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'দাঁড়াও' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কোনো পাখি যখন শিকারির পাতা ফাঁদে আটকে পড়ে, তখন তার সঙ্গী পাখিরা তাকে ছেড়ে পালায় না। বিপন্ন পাখিটির পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সাহস যোগায়। আধুনিক মানুষের প্রতি কবি আবেদন রেখেছেন তারাও যেন পাখির মত বিপন্ন মানুষের পাশে থাকে। বিপদের সময় একে অপরকে ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত নয়।
"মানুষই ফাঁদ পাতছে" কবি একথা কেন বলেছেন 'মানুষ' শব্দের সঙ্গে ই ধ্বনি যোগ করেছেন কেন? তোমার কি মনে হয়?
উদ্ধৃত অংশে কবি বলতে চেয়েছেন মানুষ মানুষের শত্রু। একশ্রেণীর মানুষ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অন্য শ্রেণির মানুষকে বিপদে ফেলছে।
'মানুষ' শব্দে 'ই' ধ্বনি যোগ করার মাধ্যমে কবি মানুষ শব্দ জোর দিতে চেয়েছেন। কবি বোঝাতে চেয়েছেন শুধুমাত্র মানুষই মানুষকে বিপদে ফেলছে অন্য কেউ নয়।
"মানুষ বড় একলা তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও" এই পঙ্ক্তটি তিনবার ব্যবহার করার কারণ কী হতে পারে বলে তোমার মনে হয়?
দাঁড়াও কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় আধুনিক মানুষের একাকিত্বের কথা বলতে চেয়েছেন। আধুনিক যুগে মানুষের সাথে মানুষের বন্ধন আলগা হয়ে গেছে। আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষকে দিন দিন একলা করছে। আধুনিক মানুষ কতটা একা এটা বোঝানোর জন্যই কবি এই পঙ্ক্তিটি তিনবার ব্যবহার করেছেন।
'দাঁড়াও' কবিতায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আর্তি কীভাবে ধরা দিয়েছে?
মানবতাবাদী কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা 'দাঁড়াও' কবিতায় কবি সমগ্র মানবজাতির প্রতি একটি কাতর আবেদন রেখেছেন। তিনি বলেছেন মানুষই মানুষের শত্রু। মানুষই মানুষের জন্য ফাঁদ পাতছে। আধুনিক মানুষ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। একে অন্যের সুখে দুঃখে পাশে থাকে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে মানুষের দুর্দশা দিন দিন বেড়েই চলবে। এই কারণে কবি মানুষকে পাখির দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। পাখিরা যেমন ফাঁদে পড়া সঙ্গীকে ফেলে যায় না, মানুষেরও উচিত তেমনি ভাবে বিপন্ন মানুষের পাশে থাকা। কবি বলেছেন, "মানুষ বড়ো কাঁদছে তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।" মানুষের মনের গভীরতম স্থানের এই কান্না কবি শুনতে পেয়েছেন, তাই তিনি মানুষের দুঃখে ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।
Comments
Post a Comment