নদীর বিদ্রোহ গল্পের নোটস

নদীর বিদ্রোহ গল্পের বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য 

নদীর বিদ্রোহ গল্পের প্রাসঙ্গিক ছবি


মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পটি এক গভীর ব্যঞ্জনাধর্মী ছোটগল্প। মূলত একটিমাত্র চরিত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা এই গল্পটি আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার এক নির্মম সত্যকে আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছে।

গল্পের প্রধান চরিত্র নদেরচাঁদ একজন স্টেশন মাস্টার। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে নদেরচাঁদ প্রকৃতিপ্রেমিক। ছোটবেলা থেকে নদীর তীরে বড়ো হ‌ওয়ার ফলে নদীর সাথে তার এক অন্য রকম আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই তার কর্মক্ষেত্রের কাছেই যে নদীটি আছে, সেই নদীর সঙ্গেও তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নদীকে না দেখে সে থাকতে পারতো না।

একসময় প্রবল বর্ষার কারণে নদেরচাঁদ টানা পাঁচ দিন নদীকে দেখতে পায় না। তারপর যেদিন বৃষ্টি কমে এল, সেদিন নদেরচাঁদ নদীর কাছে গিয়ে দেখলো নদী তার উচ্ছ্বসিত জলধারার প্রবল শক্তিতে নদীর উপরে মানুষের তৈরি করা ব্রিজখানাকে যেন ভেঙে ফেলতে চাইছে। প্রথমে আনন্দ অনুভব করলেও হঠাৎ নদেরচাঁদের ভয় করতে লাগল। সে বুঝতে পারলো, নদী আসলে মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। মানুষের দেওয়া বন্ধন সে খুলে ফেলতে চায়, প্রবাহিত হতে চায় আপন বেগে। নদেরচাঁদ উপলব্ধি করে, নদীর বুকে বাঁধন দেওয়া মানুষের অনুচিত। নিজের ভাবনায় অন্যমনস্ক নদেরচাঁদকে তখনই পিষে দিয়ে চলে যায় ৭ নম্বর ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি। নদেরচাঁদের এই আকস্মিক মৃত্যুর মধ্য দিয়ে লেখক যেন যন্ত্রসভ্যতার চাকার তলায় প্রকৃতির পিষ্ট হ‌ওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন। নদেরচাঁদের পরিণতি আসলে সমগ্র প্রকৃতির‌ই পরিণতির কথাই বলে যায়।


নদের চাঁদ চরিত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো


উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা'নদীর বিদ্রোহ' গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদ। এই চরিত্রটিকে লেখক গড়ে তুলেছেন এক বিশিষ্ট মাত্রায়। আমরা নদের চাঁদ চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করে দেখব।

প্রকৃতিপ্রেম: নদের চাঁদ ছিলেন একজন খাঁটি প্রকৃতিপ্রেমিক। শৈশবে নদীর তীরে বড়ো হয়ে ওঠার ফলে নদীর প্রতি রয়েছে তাঁর গভীর ভালোবাসা। তাঁর গ্রামের নদীটি যেদিন শুকিয়ে যেতে বসেছিলো সেদিন তিনি প্রায় কেঁদে ফেলেছিলেন। এই ঘটনায় তাঁর গভীর প্রকৃতিপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।

অনুভূতিশীলতা: নদের চাঁদ ছিলেন একজন অনুভূতিপ্রবণ মানুষ। তাই তিনি বুঝতে পারেন নদীর বন্দিনী দশার যন্ত্রণা। তিনি অনুভব করতে পারেন নদীর বিদ্রোহের কারণ। তাঁর মনে হয় মানুষের উচিত নদীকে তার স্বাধীন গতিতে ব‌ইতে দেওয়া। নদীর উপর ব্রিজ তৈরি করা উচিত নয় তার মতে।

শিশুসুলভ সরলতা: নদীর বিদ্রোহ গল্পে নদেরচাঁদের আচরণে শিশুসুলভ সরলতার পরিচয় পাওয়া যায়। ভরা নদীর জলস্রোতের সাথে খেলা করার লোভ তিনি সামলে উঠতে পারেন না। চিঠির টুকরোগুলো নদীর জলে ছুঁড়ে ছুঁড়ে তিনি খেলা করেন স্রোতের সঙ্গে।

বাস্তব বোধ: আবেগপ্রবণ হলেও নদেরচাঁদ একজন বাস্তববাদী মানুষ। তাই তিনি বুঝতে পারেন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত।

পত্নীপ্রেম: নদের চাঁদ তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশ্যে একখানি দীর্ঘ পত্র লিখেছিলেন। সেই পত্র ছিল বিরহবেদনাপূর্ণ। এ থেকে পরোক্ষ ভাবে তাঁর পত্নীপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়।

বাংলা ব্যাকরণ শিখতে আমাকে YouTube-এ সাবস্ক্রাইব করার জন্য এখানে ক্লিক করো।

আর‌ও পড়ো



Comments

Popular Posts