দেবতার বিদায় কবিতার ব্যাখ্যা | দেবতার বিদায় কবিতার প্রতি লাইনের ব্যাখ্যা

 দেবতার বিদায়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দেবতা মন্দির মাঝে ভকত প্রবীণ
জপিতেছে জপমালা বসি নিশিদিন।
হেনকালে সন্ধ্যাবেলা ধুলিমাখা দেহে
বস্ত্রহীন জীর্ণ দীন পশিল সে গেহে।
কহিল কাতরকণ্ঠে "গৃহ মোর নাই
এক পাশে দয়া করে দেহো মোরে ঠাঁই।"
সসংকোচে ভক্তবর কহিলেন তারে,
"আরে আরে অপবিত্র, দূর হয়ে যারে।"
সে কহিল, "চলিলাম"--চক্ষের নিমেষে
ভিখারি ধরিল মূর্তি দেবতার বেশে।
ভক্ত কহে, "প্রভু, মোরে কী ছল ছলিলে!"
দেবতা কহিল, "মোরে দূর করি দিলে।
জগতে দরিদ্ররূপে ফিরি দয়াতরে,
গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে।

কবিতার সরল অর্থ

দেবতার মন্দিরে বসে প্রবীণ ভক্ত দিনরাত জপমালা জপ করছে। এমন সময় সন্ধ্যাবেলা ধুলো মাখা শরীরে বস্ত্রহীন জীর্ণ এক দরিদ্র সেই গৃহে প্রবেশ করল। কাতর কণ্ঠে বলল "আমার ঘর নেই, দয়া করে এক পাশে আমাকে জায়গা দাও।" ভক্ত সংকোচের সঙ্গে তাকে বললেন "আরে আরে অপবিত্র, তুই দূর হয়ে যা।" সে তখন বলল "চললাম" -- এই বলে চোখের পলকে ভিখারি দেবতার বেশ ধারণ করল। তখন ভক্ত বললো, "প্রভু আমাকে সাথে এ কী ছলনা করলে!" দেবতা বললেন "আমাকে তুমি দূর করে দিলে। জগতে দরিদ্রের বেশ ধারণ করে আমি দয়া ভিক্ষা করে ঘুরে বেড়াই। গৃহহীনকে গৃহ দিলে আমি সেই ঘরে থাকি।"



কবিতার মর্মার্থ

এই কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দরিদ্র মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবার আদর্শ, তথা জীব সেবার মধ্যে শিব সেবার আদর্শকে তুলে ধরেছেন। প্রকৃত পক্ষে ধর্মীয় আচার ও সংস্কার পালনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা বৃথা। পূজা পাঠ ও মালা জপ করে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা যায় না। মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ। তাই ঈশ্বরকে খুশি করতে হলে মানুষের সেবা করতে হবে। ঈশ্বর দরিদ্র মানুষের বেশে মানুষের দয়া ভিক্ষা করে ফেরেন এবং দরিদ্র গৃহহীনকে আশ্রয় দিলে ঈশ্বরকে আশ্রয় দেওয়া হয়। 

Comments

Post a Comment

Popular Posts